পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

বেতহাতে বিদ্রূপ-পরায়ণ রুক্ষভাষী দিকটা নীচের ক্লাসের ছেলের কাছে তাঁকে ভয়ের সামগ্রী ও উঁচু ক্লাসের ছেলেদের কাছে ঠাট্টার বস্তু করে রেখেছিল। ছেলেদের মন প্রাণগুলি এত কোমল, এত স্পর্শালু, এত শীঘ্র দাগ নেয় যে, তাদের হৃদয়জয় এক দিক যেমন খুব সহজ, আর এক দিয়ে তেমনি শক্ত ব্যাপার।

 আমাদেরই দেওঘর স্কুলের পঞ্চম মাষ্টার কীর্ত্তিচন্দ্র দত্ত ঝা-মশাই ছিলেন জাতিতে পাণ্ডা ব্রাহ্মণ, দেওঘরের পাণ্ডাদের মধ্যে বি এ পাশ মানুষ তখন ছিল প্রায় আকাশ কুসুমের যত দুর্ল্লভ পদার্থ। মোট। থলথলে কালো ভূঁড়েল মানুষটি মুহুর্মুহু পানতামাক সেবার ফলে কালো ময়লা দাঁত বার করে যখন হাসতেন আর স্থূল রসিকতা করতেন তখন সমস্ত ক্লাস হেসে কুটিপাটি হ’তো। তাঁর কয়েকটি বাঁধা রসিকতা ছিল যা শুনে শুনে আমাদের কর্ণ হয়ে গিয়েছিল অভ্যস্ত; সেই সব রসিকতা তাঁকে বলিয়ে প্রসন্ন করবার ও তাঁকে ভুলিয়ে পড়ার সময়টা ফাঁকি দিয়ে কাটিয়ে দেবার অছিলায় একজন উঠে হয়তো জিজ্ঞেস করলো, “সার, সার, “ইষ্টু পিট কি ধাতু কি প্রতায়?” এক গাল হেসে ঝা-মশাই প্রশ্নকারীকে কাছে ডেকে বললেন, “ইষ্টুপিট? সে হচ্ছে ইষ্ট পূর্ব্বক পিট ধাতু এক-দুই—তিনচার ঘা প্রত্যয়”, বলে গুম্ গুম্ করে পিঠে চারটে বিরাশী শিক্কা ওজনের কিল্ বসিয়ে দিলেন। একটা হাসির ঝড়ের মধ্যে সেদিনকার পড়ার চাপটা অমনি সহনীয় রকম লঘু হয়ে গেল, চাই কি রসালাপে হাস্য পরিহাসে ঘণ্টাকে ঘণ্টাই কাবার।

৮৮