পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

বেঁটে সেঁটে আকারে এতটুকু চন্দ্রবাবু চতুর্থ মাষ্টার ছিলেন নিতান্ত মাটির মানুষ, তাঁর রাগের ভান আর বেতের আস্ফালনে সারা ক্লাস পুলকে মুখর হয়ে উঠতো; গণ্ডগোল থামাবার জন্যে স্বয়ং হেড মাষ্টার মশাইকে প্রায় ছুটে আসতে হতো। শিশু-শাসনে শিশুর চেয়েও অসহায় এই মানুষটিকে কেউ আমলেই আনতো না, অথচ তাঁরও দিন সুখে দুঃখে আর দশ জন কড়া নিয়মবাগীশ রুদ্র মাষ্টারের মতই কেটে যেত। সেকেণ্ড মাষ্টার ছিলেন সব চেয়ে কড়া মানুষ, যেমন গম্ভীর তেমনি নীরব; তাঁর ধীর হিসেব করা হাঁটায় এমন এক জলজীয়ন্ত গুরুমশাই ছিল যে, তাঁকে ভয় ও সমীহ না করে উপায় ছিল না। এই মাষ্টার ছুটিতে যাওয়ায় থার্ড টিচার হয়ে আসেন বকুলাল বিশ্বাস ও তাঁর বন্ধু আসেন সহকারী হেডমাষ্টারের পদে। এঁরা দু’জনেই ছিলেন ভক্ত বৈষ্ণব, সঙ্কীর্ত্তনে ও হরিনামে এঁদের চোখে ধারা বইতো। মাষ্টারে ও ছাত্রে গভীর প্রেম এই বকুবাবুকে দিয়ে আমি প্রথম বুঝি, আমাকে দেখবা মাত্র তিনি এমন ভালবেসে ফেলেছিলেন যে আমি তা’ দেখে আশ্চর্য্য হয়ে যেতুম। এখন তিনি বোধ হয় মুন্সেফ, পথে ঘাটে আচম্বিতে ক্বচিৎ কদাচিৎ ছাড়া দেখা সাক্ষাৎ বড় একটা এখন আর হয় না। তার ওপর আমি ডাকসাইটে বোমাড়ে আর তিনি ক্ষুদে হাকিম, কাজেই এ অবৈধ প্রণয় মনে প্রাণে চেপে রাখা ছাড়া তাঁর গতি কি আছে?

৮৯