পাতা:আমার জীবন.djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 S আমার জীবন আসিয়া ভারি গোলযোগ করিবে, তাহাতে অনেক সময় নষ্ট হইবে এবং কাজের অনেক হানি হইবে । আর সে লেঠা করিয়া কাজ নাই, এই ভাবিয়া পাক করিতে চলিলাম। তখন পাক করিয়া অনেক রাত্রি বসিয়া থাকিলাম । বাহির বাটীর কাছারী আর ভাঙ্গে না, কর্তাও বাটীর মধ্যে আইসেন না। তখন আমি অন্যান্ত সকল লোককে ভাত দিয়া এক প্রকার কাজ মিটাইয়া কর্তার ভাত লইয়া বসিয়া থাকিতাম, আর মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, কর্তা এতক্ষণ পর্যন্ত আইলেন না, ইহার পরে ছেলেরা জাগিয়া উঠিবে। তাহা হইলে আমার আজি আর খাওয়া হইবেক না । এই ভাবিতে ভাবিতে সেই ভাবনাটি সিদ্ধ হইল। কর্তাও বাটীর মধ্যে আসিলেন, ছেলে একটি জাগিয়া কাদিতে আরম্ভ করিল। আমি কর্তার সম্মুখে ভাত দিয়া ঐ ছেলেটিকে আনিলাম । মনে করিলাম, কর্তার খাওয়া হইতে হইতে ছেলেটির ঘুম আসিবে। না হয় কোলে লইয়াই খাওয়া যাইবেক । তাহার খাওয়া হইতে না হইতেই আর একটি ছেলে উঠিয়া কাদিতে লাগিল । তখন মনে করিলাম, এ দুজনাকে লইয়াই খাওয়া যাইবে, এই বলিয়া সে ছেলেটিও আনিলাম। আমি ঐ দুই ছেলে লইয়াই ভাত খাইতে বসিলাম । ইতিমধ্যে দৈবাৎ ঝড় বৃষ্টি আসল। তখন ঐ ঘরের দীপটাও নিভিয়া গেল। তখন অন্ধকার দেখিয়া ঐ দুই ছেলে কাদিতে লাগিল। আমার এত ক্ষুধা হইয়াছিল যে, আমি যদি ঐ ঘরে এক থাকিতাম, তাহা হইলে ঐ অন্ধকারেই ভাত খাইতাম । যে সকল চাকরাণী আছে তাহারা বাহিরের লোক। রাত্রিকালে ছেলেজটিকে কিছু অন্ধকারেও বাহিরে রাখা যায় না। বিশেষ ছেলে দুটি কাদলে কর্তাটি, কাদে কেন কাদে কেন, বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে সোর করিবেন। তদপেক্ষ আমার না খাওয়াই ভাল । তখন কাজে কাজেই ঐ ভাত ঐখানে রাখিয়া অস্ত ঘরে বাইতে হইল। পরে ঝড় বৃষ্টি কম হইলে ঐ ছেলেরা ঘুমাইয়া পড়িল। তখন অধিক রাত্রি হইয়াছে, আমারও অতিশয় আলস্ত হইল সুতরাং সে দিবস আর খাওয়া হইল না । পর দিবস ঐ নিয়মে সকল কাজ তাড়াতাড়ি সারিয়া পাক করিতে চলিলাম ।