পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস ১৭৩ তাহাদের রাত্রিভোজন নিষেধ, স্বর্য্যাস্তের পূর্ব্বে আহারের নিয়ম। জৈনধতির মুখে কাপড় জড়াইয়া রাস্ত বাট দিয়া চলে, পাছে তাছাদের নাসারন্ধ দিয়া কোন জীবাণু প্রবেশ করে, পাছে পদদলিত হইয়া কোন কীট মারা পড়ে। কথিত আছে যে এই অতিমাত্র অহিংসা নিয়মপালনই জৈন রাজ্য নাশেব মূল। অনহলবাড়ার শেষ রাজা কুমারপাল গোড়া জৈন ছিলেন, বর্ষাকালে জীবহিংসার ভয়ে তিনি নিজ সৈন্তসমস্তুের চলাচল বন্ধ করিয়া মহা অনর্থ ঘটাইয়া ছিলেন। ধর্ম্মনীতিতে অনেকট সাদৃশ্য থাকিলেও সাধন প্রণালী সম্বন্ধে উক্ত দুই ধর্ম্মে বিস্তর প্রভেদ। উভয় ধর্ম্মই সংযম ও অন্তঃশুদ্ধি উপদেশ করেন কিন্তু সাধনা এক নহে। বৌদ্ধধর্ম্মের যোগ প্রণালী মিতাহার, মিতাচার, জৈনপন্থ অন্ততর। বুদ্ধদেব তপশ্চর্য্যায় চূড়ান্ত সীমায় গিয়া মধ্যপথে ফিরিয়া আসেন—ইন্দ্রিয়সেবা ও ইন্দ্রিয়নিগ্রহ এই দুই প্রান্তের মধ্যবর্ত্তী পথ। জৈনগুক মহাবীর ১২ বৎসর কঠোর তপস্যা করিয়া সিদ্ধিলাভ করেন ও জীবনের শেষ পর্য্যন্ত তপঃসাধনে নিযুক্ত ছিলেন–জৈনদের আচার অনুষ্ঠান সেই আদর্শে নিয়মিত ; দীর্ঘ উপবাসাদি দ্বারা শরীর শোষণের নিয়ম যতিদের জীবনব্রত। র্তাহারা আর সকল জীবের জীবন রক্ষণে তৎপর, কেবল নিজের শরীরের প্রতি দয়া মায় পরিত্যাগ করিয়া আত্মহত্যার পথ প্রস্তুত করিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ করেন না। জৈনপন্থীর দুই শাখা —শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর । শ্বেতাম্বর জৈন শ্বেতবস্ত্রধারী, দিগম্বর নগ্ন সন্ন্যাসী, আকাশ যাহার বস্ত্র, গ্রীকের Gymnosophist বলিয়। যুদের বর্ণনা করিয়াছেন। একালে উভয় পন্থাই বস্ত্র ধারণ করেন, কেবল দিগম্বর জৈনেরা বিবস্ত্র হইয়া আহার করিবার নিয়ম এখনে পর্য্যন্ত রক্ষা করিয়া আদিতেছেন। বৌদ্ধ ত্রিপিটক শাস্ত্রে দিগম্বর সন্ন্যাসী নিগণ্ঠ ( নিগ্রন্থ ) অর্থাৎ বন্ধনশূন্ত বলিয়া বর্ণিত। বৌদ্ধ শাস্ত্রের বর্ণনা হইতে পাওয়া, যায় যে, বুদ্ধের সময় এই সন্ন্যাসী দলের দলপতি ছিলেন নিগণ্ঠ জ্ঞাতিপুত্ত, অর্থাৎ জ্ঞাতৃবংশীয় মহাবীর, জৈন শাস্ত্রে যাহার নাম বৰ্দ্ধমান মহাবীর-ইহ হইতে দিগম্বরদের প্রাচীনত্ব এবং মহাবীরকে বুদ্ধদেবের সমসাময়িক বলিয়া স্থির করা যায়। সম্ভবতঃ খৃষ্টাব্দের প্রারম্ভে তাহদের শাখাভেদের স্বত্রপাত। জৈনধর্ম্মের উৎপত্তি বিষয়ে দ্বিবিধ মত প্রচলিত। কোন কোন পণ্ডিতের মত এই যে জৈনধর্ম্ম বৌদ্ধধর্ম্মের শাখা মাত্র, কিন্তু একথা অপর পণ্ডিতেরা অস্বীকার করেন। র্তাহারা বলেন যে বৌদ্ধধর্ম্ম প্রতিষ্ঠিত হইবার বহুকাল পূর্ব্ব হইতে এদেশে জৈনধর্ম্ম চলিয়া আসিতেছে। জৈনেরা নিজে তাহদের তীর্থঙ্কর মহাবীরকে শাক্যসিংহের গুরু বলিয়া বিশ্বাস করেন। বৌদ্ধমত ভ্রান্ত বলিয়া তাহাদের অগ্রাহ্য। ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, বৌদ্ধধর্ম্মের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে জৈনধর্ম্ম ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।