পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস २8१ বিদেশে ভ্রমণে আমাদের মনেব সঙ্কীর্ণতা দূর হয়, আমরা যুবোপীয় সমাজ থেকে নূতন রীতিনীতির সংস্পৰ্শ লাভ করি, নুতন সমাজতন্ত্র -সাম্য স্বাধীনতা একতা মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আসি। অল্প লোকের মনোগত ভাব-তরঙ্গ ক্রমে দূরে দূরে বিস্তৃত হয়ে পড়ছে। এই পূর্ব্বপশ্চিমের যোগে নবীন প্রাচীনের সংঘর্ষে আমাদের সামাজিক বিপ্লব উপস্থিত হয়েছে। এই সংঘর্ষের ফলে সকলি যে ভাল, সকলি উন্নতি হচ্ছে তা বলা যায় না ; ভালর সঙ্গে মন্দও প্রস্তুত হচ্ছে মানতেই হবে। আমাদের জীবন কতকটা দ্বিধাভিন্ন হয়ে যাচ্ছে-ঘরে এক বাহিরে এক ;–নকলের যে সমস্ত কুফল, কতকটা কৃত্রিমত এসে পড়ছে- আমাদের মধ্যে য়ুরোপ সমাজের বিলাসিত কতকটা প্রবেশ করছে। সে যাই হোক, মোটের উপর বলা যেতে পারে এই ভাল মন্দর ভিতর দিয়ে আমাদের সমাজ পরিবর্তন ও উন্নতির দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। পুরাকালে ভারতবর্ষ আপনার সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর ভিতর বদ্ধ থেকে জাতিভেদের দুৰ্দ্ধৰ্ষ প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন ; একালে আমরা নূতন শিক্ষা দীক্ষা লাভ করে সেই প্রাচীর ভাঙবার পন্থ অন্বেষণ করছি--দেখছি ভাঙ্গ কি অসামান্ত কঠিন ব্যাপার! ধর্ম্ম-সংস্কার শিক্ষিত মণ্ডলী হিন্দুসমাজের বর্তমান অবস্থায় অসন্তুষ্ট ; সমাজ-সংস্কারের আবশ্যকতা তাহাদের অনেকেরই মনে জাজ্বল্যমান কিন্তু কি উপায়ে তাহ সাধিত হইবে সে বিষয় লষ্টয়াই মতভেদ। কাহারো মত এই যে জোর জবরদস্তি করিয়া জুতিবন্ধন ছিন্ন করিয়া ফেল—সামাজিক কুরীতি কুসংস্কাৰ উৎপাটন কর । তদপেক্ষা শান্ত ও দূরদর্শী লোকের বলেন, জ্ঞান ও ধর্ম্মশিক্ষা দ্বারা আগে লোকের মনকে প্রস্তুত কর, সমাজ-সংস্কার আদিতে কালবিলম্ব হইবে ম -মূলে কুঠারাঘাত কর ক্ষম আপন হইতেই ভূমিসাৎ হইবে। অন্ত কথায়, তাছাদের মতে ধর্ম্ম-সংস্কারের সোপান দিয়া সমাজ-সংস্কারে আরোহণ করাই প্রকৃষ্ট পন্থা । সমাজ-সংস্কারের বিষয়ে আমার যা বক্তব্য তাহা ত বলা হইয়াছে, এথন ধর্ম্ম-সংস্কার সম্বন্ধে দু-একটা কথা বলিতে ইচ্ছা করি । কিন্তু ধর্ম্ম-সংস্কার-বার্ত্তা বলিতে গেলে ধর্ম্মপ্রাণ সাধুপুরুষদিগের জীবন-চৰ্চ্চা আবগুক হইয় পড়ে। অতএব এই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্র ধর্ম্মসমাজের শীর্ষস্থানীয় যে জগদগুরু শঙ্করাচার্য র্তাহার জীবনী হইতে আরম্ভ করিয়া একালের আর আর সূর্ম্মবীরের চরিত-চিত্র অল্পাধিক মাত্রায় দেওয়া যাইবে, সেই সঙ্গে তাহীদের কার্য্যবিবরণীও যথাক্রমে বর্ণিত হইবে।