পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফিজিক্স। ডঃ বালিগা ঈশ্বর বিশ্বাসী বিজ্ঞানী। ডঃ বালিগার ধারণার ঈশ্বর অনেকটা বিজ্ঞানী মৃণাল দাশগুপ্তের ধারণার ঈশ্বরের মত।

 ডঃ বালিগার কথায়, “যাঁরা ঈশ্বরকে সাকার বলেন তাঁরা ঈশ্বরকে একটা নিদিষ্ট সীমার মধ্যে এনে ফেলেন। ঈশ্বর তাতে ছোট হয়ে যান। পাহাড়ের আকার আছে, হিমালয় পাহাড়েরও ভর-ভার পরিমাপ করা যায়। কিন্তু ঈশ্বর অপরিমেয়। আবার যাঁরা বলেন, ঈশ্বর নিরাকার এক শক্তি, আমার মনে হয়, তাঁরাও ঈশ্বরকে মাপের মধ্যে নিয়ে আসেন। কারণ যতো বড়ো শক্তিই হোক, বিজ্ঞানের পন্থা অনুসরণ করে সেই শক্তি পরিমাপ করা যায়। অথচ ঈশ্বর অপরিমেয়।

 “সুতরাং ঈশ্বরকে সাকার অথবা নিরাকার কোনোটাই বলা যায় না। ঈশ্বর দেহধারী কোনো পুরুষ নন, আবার তাঁকে যদি দেহহীন কোনো মহাশক্তি বলি তা-ও ঠিক হয় না।”

 (এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, হিন্দুদের ঈশ্বর আবার মানুষের মত নারী-পুরুষ এই দু'ভাগে বিভক্ত।)

 ডঃ বালিগার ধারণায় ঈশ্বর কেমন নন, এ-তা আমরা জানতে পারলাম। জানতে কি পারলাম, তাঁর ধারণায় ঈশ্বর কেমন?

 এ ব্যাপারেও তিনি স্পষ্টবাদী। সাফ জবাব, “ঈশ্বর তো একটা মিস্টিক ব্যাপার যা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারি নি।”

 ডঃ বালিগার মত ঈশ্বর বিশ্বাসী বিজ্ঞানীর কাছ থেকে ঈশ্বরের সংজ্ঞা নিরূপণের জন্য যে সুচিন্তিত মতামত পেলাম, তাতে বিষয়টা স্পষ্ট হওয়ার পরিবর্তে আরও তালগোল পাকিয়ে গেল।

 ডঃ বালিগর ধারণাকে মানলে সব ধর্মের অবতারদের ঈশ্বর দর্শনের দাবিকেই বাতিল করতে হয়। বালিগার ধারণায় ঈশ্বর কখনও আকার বা মৃর্তিতে মূর্ত হয়ে দেখা দিতে পারেন না। তাঁর ধারণায়, “ঈশ্বর মূর্তি হল একটা মডেল"। বালিগার ধারণায়—ঈশ্বর একটা উপলব্ধির ব্যাপার। এটা ধরা, ছোঁওয়া বা দেখার ব্যাপার নয়।

 কীভাবে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা যায়?

 উঃ বালিগার উত্তর, “ধ্যানে।”

 ডঃ বালিগার ধারণার ঈশ্বর শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ালেন? এক: ঈশ্বর নিরাকার। দুই: ঈশ্বর সাকার অথবা নিরাকার কোনওটাই নয়। তিন: ঈশ্বর মিষ্টিক বা রহস্যময়। চার: ঈশ্বরকে ধরা, ছোঁয়া, দেখা যায় না। পাঁচ: ধ্যানে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা যায়।

 এরপর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

১৮৬