পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 'ঈশ্বর আছেন’ প্রমাণ করা খুব সোজা! খুব কঠিন!


 যাঁরা 'ঈশ্বর আছেন’ প্রমাণ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা এইরূপ করুন:

 এক: ঈশ্বরের সংজ্ঞা নিরূপন করুন।

 দুই: সংজ্ঞায় যেন কোনও ধরনের স্ববিরোধিতা না থাকে।

 তিন: বিরোধিতা মেটাতে বিভিন্ন ধর্মমতগুলো তাঁদের ঈশ্বর বিষয়ক সংজ্ঞাগুলো কিছু পাল্টে-টাল্টে নিন।

 চার: ঈশ্বরের মৃর্তির ব্যাপারটা 'প্রতীক' বা 'রূপক' অথবা 'মডেল' কিনা জানান।

 পাঁচ: ঈশ্বরের কাজ-কর্মের পরিধি নির্ণয় করুন। এই নির্ণয়করণ খুবই জরুরী। কারণ, ঈশ্বর শক্তি, প্রকৃতির নিয়ন্তক শক্তি, প্রকৃতি ইত্যাদির কোনও একটি বলে বিবেচিত হলে তাঁর কাজ-কর্মের মধ্যে ভক্তের প্রার্থনা পূরণ অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। ফলে মন্ত্র-তন্ত্র ও ঈশ্বরের স্নেহধন্য অবতারদের ভূমিকা নিতান্তই অবান্তর হয়ে পড়ে। অবান্তর হয়ে পড়ে মৃত্যু পরবর্তী পাপ-পূণ্যের বিচার ব্যবস্থার ধারণা।

 ছয়: আত্মার সংজ্ঞা নিরূপণ করুন। আত্মা নিয়েও ‘বারো রাজপূত্তুরের তের হাঁড়ি'। ধর্মে ধর্মে মতান্তরের যেমন শেষ নেই, তেমনি একই ধর্মে আত্মা নিয়ে কত-না স্ববিরোধিতা।

 আত্মার অবিনশ্বরতায় বিশ্বাস করে না, এমন ধর্ম-বিশ্বাসীর সংখ্যাও বিপুল। সে ক্ষেত্রে পাপ-পূণ্যের বিচারের প্রশ্নই তো তামাদি হয়ে যাচ্ছে।

 সাত: পরলোকে পাপ-পূণ্যের ভোগ কি শারীরিক?

 আট: ঈশ্বরের সঙ্গে অবতারদের সম্পর্ক নির্ণয় করুন।

 নয়: বাস্তবে ঈশ্বর-দর্শন সম্ভব কি না জানান।

 দশ: তীর্থ ও পবিত্র স্থানগুলোর সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক কী?

 এগারো: মন্দির, মসজিদ, গীর্জা ইত্যাদি উপাসনাস্থলগুলোর ভূমিকা কী? এইসব উপাসনাস্থলের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক কী? ঈশ্বর কি এই উপাসনাস্থলে বিরাজ করেন? তবে কি ঈশ্বর সব-কিছুতে অবস্থান করেন না?

 বারো: 'ঈশ্বর আছেন’–প্রমাণ হতে পারে অতি সহজেই। যাঁরা অবতার, যাঁরা ঐশ্বরিক ক্ষমতার দাবিদার, তাঁরা তাঁদের ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখলেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ, ঈশ্বর থেকেই তো ঐশ্বরিক। ঈশ্বর না থাকলে ঐশ্বরিক হয় কী করে?


 'ঈশ্বর আছেন' প্রমাণ করাটা সত্যিই খুব সোজা, খুব কঠিন।


 এত কিছুর পর আমরা নিশ্চয়ই বলতে পারি:

 'ঈশ্বর' সর্বকালের সেরা গুজব।

১৮৭