পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেকেই যুগের তালে তাল মিলিয়ে কিছুটা প্রগতি, কিছুটা আশৈশব বহন করা ঈশ্বর-বিশ্বাস, কিছুটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় অতি অকিঞ্চিৎকর আমিত্বের পরম বিস্ময় এবং কিছুটা অস্বচ্ছ ধারণাকে মিশিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের এক স্রষ্টা নিয়ন্ত্রক সৃষ্টি করে। এই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রকই ঈশ্বর। এইসব উচ্চকোটির শিক্ষিতেরা আরও একটি যুক্তিকে কাজে লাগান—বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যখন সৃষ্টি হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই তার স্রষ্টাও আছে।

 কিন্তু তাঁরা তাঁদের যুক্তিকে লক্ষণের গণ্ডির মতো এখানে আটকে রাখাকে নিরাপদ বিবেচনা করে আর এগুতে চান না। আরও একটু এগুলেই, আরও একটু যুক্তিনিষ্ঠ হলেই স্বতস্ফূর্ততার সঙ্গেই প্রশ্ন আসবে-ব্রহ্মাণ্ডকে নয় সৃষ্টি করলেন ঈশ্বর, কিন্তু ঈশ্বরকে সৃষ্টি করলেন কে? প্রশ্ন কিন্তু এখানেই থেমে থাকবে না। তারপরও প্রশ্ন আসবে—ঈশ্বরের স্রষ্টাকে সৃষ্টি করলেন কে? সেই স্রষ্টাকেই বা কে সৃষ্টি করলেন? এমনি করে প্রশ্নমালা চলতেই থাকবে, শেষ সমাধানে কখনই পৌঁছানো যাবে না।

O

ব্রহ্মাণ্ডকে নয় সৃষ্টি করলেন ঈশ্বর, কিন্তু ঈশ্বরকে সৃষ্টি করলেন কে? প্রশ্ন কিন্তু এখানেই থেমে থাকবে না। তারপরও প্রশ্ন আসবে—ঈশ্বরের স্রষ্টাকে সৃষ্টি করলেন কে? সেই স্রষ্টাকেই বা কে সৃষ্টি করলেন? এমনি করে প্রশ্নমালা চলতেই থাকবে, শেষ সমাধানে কখনই পৌঁছানো যাবে না।

O

 আমার এমনতর উত্তর শুনে কেউ কেউ বলতেই পারেন, “ঈশ্বর স্বয়ম্ভু”। আবারও স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে আসবে, “ঈশ্বর যে স্বয়ম্ভু, আপনি কী করে জানলেন? কে জানালেন? কেউ জানিয়ে থাকলে, তাঁর জানাটাই যে ঠিক, তার প্রমাণ কী? আর যে যুক্তিতে ঈশ্বর স্বয়ম্ভু, সেই যুক্তিতেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া হতে বাধা কোথায়?

O

যে যুক্তিতে ঈশ্বর স্বয়ম্ভু, সেই যুক্তিতেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া হতে বাধা কোথায়?

O

 প্রকৃতিকে যাঁরা ঈশ্বর সংজ্ঞা দিতে চান, তারা প্রকৃতির নিয়মকে সর্বশক্তিমান, সর্বনিয়ন্তা ভাবলে বেজায় মুশকিল। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে, তাতে মানুষকে ঈশ্বরের নিয়ন্তা বলতে তো কোনও অসুবিধে দেখি না।

 মজার কথা হলো, এই ধরনের চিন্তার মানুষরা নিজেদের উচ্চশিক্ষিত ও আধুনিক বলে ভাবতে অভস্ত। এরা অনেকেই প্রকৃতি বা পরমব্রহ্ম নামক ঈশ্বরের সঙ্গে নিজের আত্মাকে (!) যুক্ত করতে যোগ, মেডিটেশন, প্রাণায়ম

৪৬