পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কারণ: একুশ

ঈশ্বরই সবকিছুর নিয়ন্তা হলে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা কি অর্থহীন হয়ে যায় না?


ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রক শক্তিকে স্বীকার করলে, অর্থাৎ ঈশ্বরকে সব কিছুর একমাত্র নিয়ন্তা বলে ধরে নিলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ, প্রশাসন, আইনের শাসন, সব কিছুকেই অস্বীকার করতে হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছেয় অপরাধ যখন সংগঠিত হবার তখন হবেই। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া যদি ঈশ্বরের অভিপ্রেত হয়, তবে অপরাধী শাস্তি পাবেই। পুলিশ রেখে ঈশ্বরের ইচ্ছেয় সংগঠিত কোনও অপরাধ কি ঠেকান যেতে পারে? ঈশ্বরই সব কিছুর নিয়ন্তা হলে কখনই ঠেকান যেতে পারে না। এরপর কি পুলিশ পোষার জন্য ব্যয় একান্তই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে না?

 একজন অপরাধী বিচারে শাস্তি পাবে কি পাবে না, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা যখন বিচারকদের পরিবর্তে ঈশ্বরেরই হাতে, তখন কেন এই বিচারের প্রহসন? এই প্রহসন কি ঈশ্বরের ক্ষমতার প্রতি মানুষের আস্থাকে আঘাত দিচ্ছে না? সব ধর্মের ধর্মগুরুদের কি উচিত নয়, এই বিষয়ে সরকারকে ওয়াকিবহাল করিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে আন্তরিকতার সঙ্গে সচেষ্ট হওয়া? সেই সচেষ্ট হওয়াটা অন্তত বাবরি মসজিদ আবার গড়ে দেবার দাবির মত, বা বাবরি ভেঙে রাম মন্দির গড়ে তোলার দাবির মত জোরাল ও জঙ্গি হবে, এটুকু প্রত্যাশা নিশ্চয়ই রাখতে পারি।

 আচ্ছ, এই রামমন্দির বা বাবরি মসজিদ গড়ার আন্দোলনের সত্যিই কি এক বিন্দু প্রয়োজন আছে? কিসের জন্য এই আন্দোলন গড়ে তোলা? রামের ইচ্ছে হলে রামমন্দির গড়ে উঠবেই। পৃথিবীর কোনও শক্তির সাধ্য নেই, তাতে বাধ সাধে। আল্লাহের ইচ্ছে হলে বাবরি মসজিদ আবার গড়ে উঠবেই। কোনও শক্তির ক্ষমতা নেই, তাকে প্রতিহত করে। এই পরিস্থিতিতে ধর্ম-বিশ্বাসীদের সমস্ত রকম আন্দোলনই অপ্রয়োজনীয় এবং একান্তভাবেই মূল্যহীন। মূল্যহীন সরকারের যে কোনও উদ্যোগ |

 যখন রামমন্দির বা বাবরি মসজিদ গড়তে সরকারের উপর চাপ দিতে ধর্মগুরুরা গণউন্মাদনা তৈরি করেন, তখন অবাক হতেই হয়। কারণ, ওঁরা মুখে যা বলেন, কাজে তা বিশ্বাস করেন না। ওঁরা খুব ভাল মতই জানেন, ঈশ্বর বা আল্লাহের ক্ষমতার দৌড় কত দুর। জানেন বলেই, বিশ্বাস করেন, বিতর্কিত জমিতে মন্দির হবে কি মসজিব, অথবা অন্য কিছু, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছের উপর। আর তাই তাঁদের ইচ্ছে পূরণের জন্য ঈশ্বরবা আল্লাহের কাছে প্রার্থনা না জানিয়ে সরকারকে ভোটবাক্সের জুজুর ভয় দেখিয়ে দু'পক্ষই বাগে আনতে চাইছে।

৪৮