আরণ্যক SS কুন্তা কিছুমাত্র না ভাবিয়া তখনই বলিল-আমি করব বাবুজী । পয়সা দিতে হবে না । কুন্তা রাজপুতের স্ত্রী, সে গাঙ্গোত রোগীর সেবা করিবে কি করিয়া ? ভাবিলাম আমার কথা সে বুঝিতে পারে নাই । বলিলাম, ওরা এটো বাসন মাজতে হবে, ওকে খাওয়াতে হবে-ও তো উঠতে পারে না। সে-সব তোমায় দিয়ে কি ক’রে হবে ? কুন্তা বলিল-আপনি হুকুম করলেই আমি সব করব। আমি রাজপুত কোথায় বাবুজী ? আমার জাতভাই কেউ এতদিন আমায় কি দেখেছে ? আপনি বা বলবেন আমি তাই করব। আমার আবার জাত কি ? রাজু পাড়ের জড়ি-বুটির গুণে ও কুন্তার সেবাশুশ্রষায় মাসখানেকের মধ্যে গিরধাৱীলাল চাঙ্গা হইয়া উঠিল। কুন্তা এজন্য দিতে গেলেও কিছু লইল না। গিরধারীলালকে সে ইতিমধ্যে “বাবা’ বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিয়াছে দেখিলাম। বলিল-আহা, বাবা বড় দুঃখী, বাবার সেবা ক’রে আবার পন্থসা নেব ? ধরমরাজ মাথার উপর নেই ? জীবনে যে কয়টি সৎ কাজ করিয়াছ, তাহার মধ্যে একটি প্রধান সৎ কাজ নিরীহ ও নিঃস্ব গিরধাৱীলালকে বিনা সেলামীতে কিছু জমি দিয়া লবটুলিয়াতে বাস করানো ৷ তাহার খুপরিতে একদিন গিয়াছিলাম। নিজের বিঘা পাচেক জমি সে নিজের স্থাতেই পরিষ্কার করিয়া গম বুনিয়াছে। খুপরির চারি পাশে। কতকগুলি গোড়ালেবুর চারা পুতিয়াছে। -এত গোঁড়ালেবুর গাছ কি হবে গিরধাৱীলাল ? --হুজুর, ওগুলো সরবতী নেবু। আমি বড় খেতে ভালবাসি। চিনি-মিছরি জোটে না আমাদের, ভূরা গুড়ের সরবৎ ক’রে ওই লেবুর রস দিয়ে খেতে ভাবি তার !
পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৫
অবয়ব