পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 ইংরাজ-বর্জিত ভারতবর্ষ। ম্যালাবার প্রদেশের ন্যায় এখানেও নারিকেলের রাজত্ব। তথাপি, অনিল-আন্দোলিত এই শাখা-পক্ষময় অরণ্যের মধ্যে—যাহা চতুর্দিকে দিগন্তে গিয়া শেষ হইয়াছে—এক একটা বড়-বড় ফাক, হলদে দাগের মত দেখা যাইতেছে। এইগুলি শুস্ক তৃণক্ষেত্র, বর্ষণের অভাবে দগ্ধ হইয়া গিয়াছে। এই শুষ্কতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাইতেছে, এবং আরও দূর প্রদেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হইয়াছে। তাঞ্জোরেও এই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা উপস্থিত হইয়াছে।

 সুতীব্র জীবন-উদ্যম-পূর্ণ বিচিত্র কোলাহল, এইখানে পৌছিবামাত্র সব. একত্র মিশিয়া যাইতেছে। উৎসবময় নগরের প্রমোদ-কল্লোল, গরুর গাড়ীর চাকার শব্দ, রাস্তার ঢাক ঢোল ও শানাইয়ের বাদ্যনির্ঘোষ, চিরন্তন বায়সদিগের কা-কা-রব, চীলদিগের তীব্র চীৎকার, উপযুপরি-বিন্যস্ত মন্দিরসমূহের স্তবগান, ভূরী ও শঙ্খধ্বনি,–এই সমস্ত শৈলদেহে প্রতিহত হইয়া অবিরাম প্রতিধ্বনিত হইতেছে।


শ্রীরাগমের অভিমুখে।

 যে পান্থনিবাসে আমি আশ্রয় লইয়াছি, উহা পূৰ্ববর্ণিত নিঃসঙ্গ শৈলটি হইতে প্রায় দেড় ক্রোশ, এবং শ্রীরাগমের বৃহৎ মন্দির হইতে তিন ক্রোশ দূরে। ইহা অরণ্যমধ্যস্থিত একটি তরুশূন্য রৌদ্রস্নাত মুক্ত পরিসরের মধ্যে অবস্থিত। এখানে একজাতীয় “লজ্জাবতী লতা-গাছ আসিয়া তালবৃক্ষের স্থান অধিকার করিয়াছে। উহার পাত এত অল্প ও এত সূক্ষ্ম যে, উহাতে কিছুমাত্র ছায়া হয় না। চারি দিকেই অবসাদক্লিষ্ট ঝোঝাড়, শুষ্ক দগ্ধ তৃণরাশি। শুষ্কতা-প্রযুক্ত এক্ষণে ভারতের সমস্ত উত্তর প্রদেশ, সমস্ত রাজস্থান অরণপথে অগ্রসর; সেই অসাধারণ শুষ্কতার একটু নমুনা যেন এই চিরআ চিরশ্যামল দক্ষিণ দেশেও আসিয়া পড়িয়াছে।

 আমার আবাস হইতে শ্রীরাগমে যাত্রা করিবার সময়, যে নগরটির