পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১২৩

থাম-গুলি ভারতীয় ধরণের—চতুমুখী; খিলানপার্শ্বের ‘ঠে’-স্বরূপ, থামের মাথাগুলি কতকগুলি বিকটাকার মূর্ত্তিতে গঠিত।

 প্রত্যেক ঘেরের তোরণের মাথার উপর সেই একই রকম, বর্ণনাতীত, গুরুভার ত্রিকোণাকৃতি চূড়া—৬০ ফুট উচ্চ। ১৫ “থাক্‌” প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড দেবমূর্ত্তি সারি সারি উপর্যপরি স্থাপন করিয়া এই চূড়াটি নির্মিত হইয়াছে। ত্রিদিববাসিগণ অযুত চক্ষু দিয়া উপর হইতে অবলোকন করিতেছেন-অযুত অঙ্গের বিবিধ ভঙ্গী করিতেছেন। কতকগুলি দেবতা স্বীয় দেহের উভয় পার্শ্ব হইতে বিংশতি বাহু হাত-পাখার মত প্রসারিত করিয়া আছেন। কঁহাদের মাথায় মুকুট, হস্তে অসি, বিবিধ প্রকারের সাঙ্কেতিক পদার্থ, পদ্মফুল, অথবা নরমুণ্ড। তাহাদের ঘন পংক্তির মধ্যে নানা প্রকার কাল্পনিক পও পরস্পরের সহিত জড়াজড়ি ভাবে রহিয়াছে;—অসম্ভব-বৃহৎ-পুচ্ছধারী ময়ূর অথবা পঞ্চশীর্ষ ভুজঙ্গ। তা ছাড়া, পাথরগুলা এমন ভাবে উত্তীর্ণ এরূপ গভীর ভাবে খোদিত যে, প্রত্যেক প্রধান ও আনুষঙ্গিক মুক্তি, সমগ্র মূর্ত্তিসমষ্টি হইতে যেন স্বতন্ত্র বলিয়া মনে হয় যেন উহাদের প্রত্যেককে পৃথক করিয়া খুলিয়া লওয়া যাইতে পারে। এই সমস্ত মূর্তি-সংঘাত আকাশ ভেদ করিয়া উন্ধে উঠিয়াছে, এবং ক্রমশঃ সরু হইয়া, সুতীক্ষ্ণ শূলাগ্রের ন্যায়, সারি-সারি কতকগুলি বিন্দুমাত্রে পর্য্যবসিত হইয়াছে। সমস্ত পদার্থ, সমস্ত জীবজন্তু, সমস্ত নগ্নমূর্ত্তি, সমস্ত পরিচ্ছদ, সমস্ত ভূষণ, একই অপরিবর্তনীয় রঙ্গে রঞ্জিত। কত কত শতাব্দীর সহিত যুঝাবুঝি করিয়া এই রংটি স্বকীয় উজ্জ্বলতা এখনও পর্য্যন্ত রক্ষা করিয়াছে। এখানে রক্ত-লোহিত বর্ণেরই প্রাধান্য। দূর হইতে দেখিলে, প্রত্যেক চূড়াই লাল বলিয়া মনে হয়। কিন্তু কাছে আসিলে, অন্য রঙ্গেরও মিশ্রণ দৃষ্ট হয়;—উহাতে সবুজ, সাদা ও সোনালি রঙ্গের মিশ্রণ রহিয়াছে।

 দেবকার্যে নিযুক্ত যে সকল ব্রাহ্মণ অতীব শুদ্ধাচারী, তাহারাই মন্দিরের শেষ ঘেরটির মধ্যে সপরিবারে বাস করিবার অধিকারী। এই