পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৩৭

কণ্ঠদেশের বিশুদ্ধ তাম-আভা অক্ষুন্ন থাকিলেও, উহাদের দীনহীন মলিন তীরবস্ত্র প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। ব্রাহ্মণ-ভারতের বার্ধক্য ও অবনতি, এই সব অমানুষিক স্মৃতি-মন্দিরের ধ্বংসদশা, উহাদের উৎসব-অনুষ্ঠানাদির ধূলিধূসর জীর্ণতা, এমন কি, এই মহাজাতির বর্তমান হীনতা-—সমস্তই, এই কুহকময় মুহূর্তে, আমার নিকট অপ্রতিবিধেয় বলিয়া মনে হইতেছে। অতীতের লোক—অতীতের ধর্ম্ম—এই উভয়েরই যুগচক্র যেন ঘুরিয়া গিয়াছে, উহারা এক্ষণে শূন্তে বিলীন হইয়াছে।,

 তথাপি এখানে বিদেশীয় ভাবের গন্ধমাত্র নাই। এই প্রাচীন সাজসজ্জার মধ্যে, আধুনিক কালেব ছোটখাটো খুঁটি নাটি সামগ্রী প্রবেশ করিয়া ইহকে বেসুরো বেখাপ্পা করিয়া তুলে নাই। বিধর্ম্মী একমাত্র আমিই এই উৎসব-অনুষ্ঠানে উপস্থিত।

 ফলতঃ এই সূর্য্যই এ দেশের মহা-ঐন্দ্রজালিক। সূর্য্যই সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া সমস্ত পদার্থকে রূপান্তরিত করিয়া তুলে। সূর্যের এই আকস্মিক উদয়ে কি-জানি কি-একটু কারুণ্য-রস আছে, যাহা মন্দিরের সহিত আজ যে দেবতার পূজা হইবে, সেই দেবতার সহিত—একতানে মিশিয়া যায়। দিগন্তে একটিমাত্র মেঘখণ্ড। ধরণীর ধূলিকণা যে আমরা—আমাদের দৃষ্টি হইতে এই মেঘখণ্ডটি সূর্য্যকে এখনও পর্য্যন্ত ঢাকিয়া রাখিয়াছে। একটি ঘোর তাম্রবর্ণ কটিবন্ধের উপরিভাগে সূর্য্যদেব অগ্নিশিখা বিকীর্ণ করিতেছেন। বিষ্ণু দেবের ত্রিশূলচিহ্বের ন্যায় তিনটি অগ্নিশিখা প্রদীপ্ত। ইহারই মধ্যে এই প্রকাণ্ড অট্টচূড়াগুলি সূর্য্যদেবের দৃষ্টিপথে পতিত হইআছে। এই রক্তিমাভ পাষাণস্ত,পগুলি-গগনচুম্বী মন্দিরগুলি দেব-মাহাত্ম্যে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে। এই সকল খোদিত প্রস্তরময় মূর্তি-অবণ্যের মধ্যে, টিয়া-পাখীর শত সহস্র নীড় রহিয়াছে। বিবিধ মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গিবিশিষ্ট লোহিত মূর্তির মধ্যে ও বাহু-জ্যার জটিল মিশ্রণের মধ্যে—সেই উচ্চ শুন্য দেশে উহারা ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে—চীৎকার করিতেছে।