পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

দর্পণ—যাহা বিরাট মন্দিরের হৃদয়দেশে প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থিত—এইখানে এমন একটি শান্তির ভাব সৰ্বত্র ওতপ্রোত হইয়া রহিয়াছে যে তাহা বাক্যের দ্বারা ব্যক্ত করা যায় না। এই সমস্ত থিলান-মণ্ডপের গোলোকধাধার মধ্যে, কোন পথ দিয়া, পুরোহিতেরা যে আমাকে লইয়া গেলেন, তাহা বুঝিবার চেষ্টা করা বৃথা। যতই আমি অগ্রসর হইতে লাগিলাম, ততই যেন সমস্ত আমার নিকট অতিভারাক্রান্ত ও অতিমানুষিক বলিয়া মনে হইতে লাগিল;— সমস্ত মন্দির উত্তরোত্তর আর ও প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথরের চালায় গঠিত। বিংশতি বাহুবিশিষ্ট দেবতা, বিচিত্র অঙ্গভঙ্গীবিশিষ্ট দেবতা—এই সমস্ত অসংখ্য বিরাট দেবমূর্তি ছায়ান্ধকারের মধ্যে সারি সারি কতই যে চলিয়াছে তাহার শেষ নাই—তাহার কোন শৃঙ্খলাও নাই। আমি তাহার মধ্যদিয়া চলিয়াছি। যেন স্বপ্নে অতিকায় দৈত্যদের রাজ্যের মধ্যদিয়া-ভয়ানকের রাজ্যের মধ্যদিয়া চলিয়াছি। চারিদিকেই অন্ধকার, এবং আমাদের পদক্ষেপে সমাধি-গহ্বরসুলভ মুখরতা যেন জাগিয়া উঠিল।

 ক্রমাগতই প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড প্রতিমা ক্রমাগতই বিরাট ব্যাপার নেপথে পতিত হইতেছে, আবার সেই সঙ্গে বব্বরোচিত অযত্ন তাচ্ছিল্য, বিষ্ঠা ও আবর্জনা রাশি। মানুষপ্রমণ সমস্ত দেয়াল, দেয়ালের গাত্র. নিঃসৃত অংশগুলা—সমস্তই কালিমাগ্রস্ত, আর্দ্রতা ও ময়লায় চিকচিক করিতেছে। এই একটা বারাণ্ডা——ইহা গজমুণ্ডধারা গণেশের নামে উৎসীকৃত, গণেশের পদতলে, শুণ্ডের নীচে, কতকগুলি পুনায়মান প্রদীপ জ্বলিতেছে, তাহারই আলোকে গণেশের বিকটাকার শরীরটা আলোকিত হইয়াছে। এই দেখ, একটা ভীষণ কোণে, পোর রাত্রিকালে, এই সকল বিকটাকার প্রঙ্করমূর্ত্তির মধ্যে, এক-পাল জীবন্ত পশু অবস্থিত, উহাদের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাইতেছে; একটা সমস্ত গো-পরিবার এখনও নিদ্রা যাইতেছে—যেন এখনও সূর্যের উদয় হয় নাই; মন্দিরকুটিমের ষাণ, উহাদের গোময়ে আচ্ছন্ন—তাহা মধ্যে পা পড়িয়া পা পিছলাইয়া যাইতেছে; ঘৃণিত বলিয়া কেহ তাহা বাহিরে,