পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৬১

নিক্ষেপ করিতে সাহস করে না,—কেন না, যাহা তাহাদের অন্ত্র হইতে নিঃসৃত, তাহাও তাহাদেরই ন্যায় পবিত্র। বড় বড় ডানা-ওয়ালা বাদুড় চাম্‌চিকা ভয়চকিত হইয়া আমাদের মাথার উপর ক্রমাগত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।

 আমার পথপ্রদর্শকেরা, কোন এক বিশেষ মুহূর্ত্তে, উৎকণ্ঠিত হইয়া তাড়াতাড়ি চলিতে লাগিল; সেই সময়ে আমরা একটা অপেক্ষাকৃত উচ্চ ও তমসাচ্ছন্ন দালানের সম্মুখ দিয়া যাইতেছিলাম; সেই দালানের গভীর-দেশে কতকগুলা বিকটাকার দেবমূর্ত্তি কতকগুলি দ্বীপের আলোকে আমি ‘চোরা-গোপ্তান্’ দেখিয়া লইয়াছিলাম। আমাকে যাহারা লইয়া যাইতেছিলেন তাহাদের মধ্যে একটি ব্রাহ্মণ, আমার নিকট আসিয়া মৃদুস্বরে আমাকে বলিলেন ঐটিই সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র স্থান; আগে আমাকে বলেন নাই, পাছে আমি বেশী দেখিয়া ফেলি।

 অবশেষে, এই গুরুপিণ্ডাকার স্তম্ভারণ্যের একটা জায়গায় আসিয়া পুরোহিতেরা থামিলেন; এই স্থানটি খুব বিশাল ও জম্‌কালো। কতকগুলা বৃহৎমন্দিরের মধ্যবর্ত্তী যেন একটা চৌমাথা-রাস্তা। এইখানে অনেকগুলি দালানের কুটিম উদ্ঘাটিত ও সর্ব্বদিকে প্রসারিত হইয়া ক্রমে ছায়ান্ধকারে মিশাইয়া গিয়াছে। অখণ্ড প্রস্তরের বিরাটাকার, বিগ্রহ সমূহ চারিদিক বেষ্টন করিয়া আছে; উহারা বল্লম, অসি, নরমুণ্ড হস্তে ধারণ করিয়া আস্ফালন করিতেছে; উহারা কালো, চিক্‌চিকে, তেলা;—হস্তঘর্ষণে উহাদের উপর লম্বা-লম্বা দাগ পড়িয়াছে; উহারা লোকের গাত্রঘর্ম্ম শোষণ করিয়াছে! কতকগুলি বেদীর উপর, তাম্র ও রৌপ্য সামগ্রী ঝিকমিক্‌ করিতেছে; কতকগুলা পিতলের চুড়াকার সামগ্রী বহুশতাব্দিব্যাপী কালপ্রভাবে বাঁকিয়া গিয়াছে,—বোধ হয় পূর্ব্ব্বে দীপাধার ছিল;—এই সমস্ত দেবীর রহস্যময় পূজার সামগ্রী। এবং ইহারই মাঝখানে, দীর্ঘকুন্তল ও নগ্নকায় ভিক্ষুকের জনতা; মন্দিরই