পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ভাবে ফিরিয়া আসিল। আমার উপর তাহার প্রবল ভালবাসা পড়িয়াছে; সে সর্ব্বজয়ী মদনের নিকট পরাভূত হইয়া, আমার দিকে বাহুপ্রসারিত করিয়া করযোড়ে মার্জনা ভিক্ষা করিতেছে; আমাকে তাহার সর্ব্বস্ব দান করিবে বলিয়া অনুনয় করিতেছে, ইহাই তাহার শেষ প্রার্থনা। এবার যখন চলিয়া গেল, তখন তাহার দেহ একটু হেলিয়া পড়িয়াছে, ওষ্ঠদ্বয় একটু ফাক হইয়া তাহার মধ্য হইতে শুভ্র দন্তরাজি প্রকাশ পাইতেছে; তাহার নাসিকায় হীরকের টুক্রাগুলি ঝিকৃমি করিতেছে; সে চায়—সে নিতান্তই চায়, আমি তাহার অনুসরণ করি; সে তাহার বাহুর দ্বারা, তাহাব কম্পিত বক্ষের দ্বারা, তাহার অর্ধনিমীলিত নেত্রের দ্বারা আমাকে ডাকিতে লাগিল; সে চুম্বকণির মত, সর্ব্বান্তঃকরণে আমাকে আকর্ষণ করিতে লাগিল। আমিও মন্ত্রমুগ্ধ অবস্থায়, ক্ষণেকের জন্য তাহাকে অনুসরণ করিলাম; কেন না, সে আমাকে সত্যই মন্ত্রমুগ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু আসলে তাহার এই প্রেমের আহবানটা সর্ব্বৈব মিথ্যা; হাসির মত এই প্রেমের প্রকাশও তাহার অভিনয়ের একটা অংশ মাত্র; একথা সবাই জানে, তবু তাহাতে আকর্ষণের কিছুই লাঘব হয় না; প্রত্যুত, এই আহবান মিথ্যা বলিয়া জানি বলিয়াই যেন উহার এই দুষ্ট আকর্ষণের মাত্রাটা আরও বৃদ্ধি হয়••

 যতক্ষণ সে অভিনয় করিতেছিল, বাদকদলের দুই গায়কেব সহিত সে যেন এক প্রকার চুম্বক-কর্ষণে সংযুক্ত কিংবা একটা অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।

 তাহারা তাহার তিন চারি পা পশ্চাতে থাকিয়া, তাহারই সঙ্গে সঙ্গে এগিয়া আসিতেছে—পিছাইয়া যাইতেছে। সে যখন এগিয়া আসে, তাহার পিছনে পিছনে তাহারা ও এগিয়া আসে,—এবং পিছাইবার সময় হইলে তাহারাই আগে পিছাইতে আরম্ভ করে। তাহারা কখনই তাহাকে নজর-ছাড়া করে না; উহাদের চোখ যেন জলিতেছে, ওষ্ঠ অনেকটা উদনাটিত রহিয়াছে, আর উচ্চৈঃস্বরে গান করিতেছে; মস্তক সম্মুখে