পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ইংরাজ-বর্জিত ভারতবর্ষ। ধুকধুক্ করিতেছে। সমস্ত আসবাবই শুফ-জীর্ণ, পোকা-খাওয়া, ভগ্নপ্রায়; কেদারায় খুব চাপিয়া বসিতে কিংবা খাটের উপর ধড়াস্ করিয়া শুইয়া পড়িতে সাহস হয় না! কিন্তু দিন গুলি বড়ই রমণীয় ও উপভোগ্য; বায়ু নিস্তব্ধ, সমুদ্রের দিগন্ত সুনীল, চতুর্দিকের সামুদ্রিক শান্তি অতীব মধুর।

 জান্‌লার উপর হাতের কুনুই রাখিয়া বুকিয়া দেখিলে আরও অনেকটা সমুদ্র ও সমুদ্রের বেলাভূমি, নিকটস্থ অনেক পুরাতন বাড়ীর বারাণ্ডা, ও আরব-ধরণের ছাদ দেখা যায়,—ছাদগুলা সূর্য্যোত্তাপে ফাটিয়া গিয়াছে; এই সমস্ত দেখিয়াও আমার আফ্রিকা মনে পড়ে। প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত, একদল নগ্নকায় মজুর পার্শ্ববর্তী একটা অঙ্গনে, জাহাজ বোঝাই করিবার জন্য, শস্যের দানা ও বিবিধ মত্সা চটাই-থলের মধ্যে ভরিতেছে, আর একপ্রকার ঘুমন্ত সুরে গান করিতেছে। '

 কি দিন, কি রাত্রি,—আমি দরজা জানলা কখনই বন্ধ করিতাম না, পাখীরা আপনার ঘরের মত স্বচ্ছন্দে আমার ঘরে আসিত; চড়াইরা আমার ঘরের মেজের মাদুরের উপর নির্ভয়ে বিচরণ করিত; ছোট ছোট কাঠবিড়ালীরাও, চারিদিকটা এক নজরে একবার দেখিয়া লইয়া ভিতরে প্রবেশ করিত, আমার সমস্ত আ বের উপর চলিয়া বেড়াইত; একদিন রাতে দেখিলান, দুইটা দাঁড়কাক আমার মশারীর কোণে বসিয়া আছে।

 আমার বাড়ীর চতুর্দিকে, ছোট ছোট নিস্তব্ধ রাস্তাগুলা (রাস্তায় নামগুলা সেকেলে পরণের) প্রখর সূর্য্যোত্তাপে যখন প্রপীড়িত হইতেছে – সেই মধ্যাহ্ন সময়ে - ওঃ! কি বিষাদময় নিস্তব্ধতা! আমার কামরার মধ্যে কিংবা কারাব চারিদিকে আধুনিক কালের কোন চিহ্রই নাই; এই সকল বিজন বারাণ্ডার কিংবা অদূরের ঐ অসীম নীল মরুক্ষেত্রের কালনির্ণ করিবার কোন নিদর্শন নাই। যাহারা শস্যের বস্তা প্রস্তুত করিতে ব্যাপৃত