পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

পর্দ্দা-মহিলাদের জন্য, ডিঙির আকারে বাঁখারির গাড়ি পর্দ্দায় সমস্ত ঢাকা। পর্দ্দার স্থানে-স্থানে ছিদ্র। সেই ছিদ্রের মধ্য হইতে রূপসীগণ। সুচিত্রিত “ডাগর-আঁখির” তীবাণ জনতার উপর বর্ষণ করিতেছেন। কোথাও কোন সুপুরুষ অশ্বারোহী ছুচালটুপির চারিধারে-জড়ানো আলদিন-ধাচার পাগড়ি পরিয়া, জিনের পাশে বল্লম আটকাইয়া—খুব ছুটিয়া চলিয়াছে। বণিদলের উটগুলা দীর্ঘরেখাকারে সারি-সারি চলিয়াছে। ধূলাধূসরিত, কর্দমলিপ্ত মজুরহাতীরা কর্ম্মান্তে ঘরে ফিরিয়া আসিতেছে। বিলাসী হাতীরা সানাই-বাদ্য-সহকারে বরযাত্রীর সঙ্গে চলিয়াছে;—পৃষ্ঠের উপর, বাসাচ্ছাদিত হাওদার মধ্যে—বর প্রচ্ছন্ন।

 পাল্কীবাহকদের, মন্ত্রপাঠের ন্যায়, একঘেয়ে গুঞ্জনধ্বনি শুনা যাইতেছে; জরির কাজ-করা রাশি-রাশি তাকিয়া-বালিশের উপর, চমধার কোন বৃদ্ধকে, অথবা কোন গম্ভীরমুক্তি মোল্লাকে চড়াইয়া, উহারা চটুলপদক্ষেপে চলিয়াছে। ফকিরের কড়ি-সমাচ্ছন্ন কথা পরিয়া, পথে-পথে ভ্রমণ করিতেছে;—এই সব আকুলচিত্ত উন্মাদগ্রস্ত লোকেরা সাধু বলিয়া সমাদৃত;—এখন হইতেই উহাদের নেত্র অন্যত্র - পরলোকের দিকে নিয়োজিত। বৃদ্ধ দরবেশদিগের সুদীর্ঘ কেশকলাপ;—সমস্ত ভস্মাচ্ছন্ন। উহারা ঘণ্টা নাড়িতে-নাড়িতে দ্রুতপদে চলিয়াছে। ইয়েমেন্সী আরবের দলে-দলে ভ্রমণ করিতেছে; নিজাম উহাদিগকে সযত্নে নিজরাজ্যে স্থাপন করিয়াছেন; উহারা যাহাতে স্থায়ী হইয়া প্রজাদের মধ্যে মিশিয়া যায়—ইহাই নিজামের মনোগত অভিপ্রায়। ঐ দেখ, দূর অঞ্চলের কোন অশ্বারোহী সর্দার,জংলি মূর্তি, মহাকায় ঘোড়াকে বিচিত্র-ভঙ্গীতে দৌড় করাইয়া ছুটিয়া চলিয়াছে। তাহার পশ্চাতে কতকগুলা বল্লমধারী ঘোড়সওয়ার।

 ধূপের সৌরভ,— সাজসজ্জার দোকানে পব্বতাকারে সজ্জিত গোলাপফুলের সৌরভ,—ঝুরিভরা শাদা জুয়ের সৌরভ, তুষারপাতের ন্যায় রাস্তার