পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

মাথা ঘুরিয়া যায় মনে হয় যেন নীচে পড়িবার জন্য উন্মুখ। কত ভাঙা খিলান;—তাহাতে প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড ফাট ধরিয়াছে। কতকগুলি দেবমন্দিরের ভগ্নাবশেষ রহিয়াছে যাহার উদ্দেশ্য অথবা নির্মাণকাল কিছুই নির্ণয় করা যায় না। ইসলামের পূর্ব্ববর্তী কাল হইতে কতকগুলা দেবমূর্তি -বানরমুণ্ডধারী কতকগুল হনুমান্;—বাদুড়দিগের সহিত গুহাগহ্বরের মধ্যে একত্র বাস করিতেছে। ছোট-ঘোট ধূপবর্তিকার মগন্ধে স্থানটি আমোদিত। রহস্যময় ভক্তগণ এখনও বোধ হয় সময়ে-সময়ে এই ধূপবর্তিকাগুলি এখানে গোপনে লইয়া আইসে।

 সর্ব্বোচ্চ-শিখরে, শেষ ছাদটির উপর একটি মসজিদ রহিয়াছে এবং একটি চতুক (Kiosk) *যেখান হইতে পূর্ব্বতন সুষ্ঠানের সমস্ত দেশ পরিবীক্ষণ এবং দিগন্তনিঃসৃত শত্রুবাহিনীর আগমন নিরীক্ষণ করিতেন। মাঠ-ময়দান উদ্যান-উপবন প্রভৃতি যে সমস্ত দৃশ্য এখান হইতে দেখা যায়, সমস্তই তখনকার কালে প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ এই সমস্ত ক্ষেত্র নিৰ্জীব ও প্রাণশূন্য।

 দেশের হাওয়া বদলাইয়াছে। আর এখন বৃষ্টি হয় না। বেশ মনে হয়, অনাবৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের অবনতি হইতেছে—ভারত অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে। এই সমস্ত গণ্ডশৈল ও প্রাকারাবলীর পরপারে অবস্থিত দুর্গনগরটি, মানিস্তব্ধতার মধ্যে,—ভূতল পর্য্যন্ত নামিয়া গিয়াছে। নগরের বহিঃপ্রাচীর,— নিজামের সংরক্ষিত সেই দস্তুর প্রাচীরটি, প্রাচীন গল্কণ্ডার—সেই পরমাশ্চর্য্য হীরকখনি গল্কার গঠনরেখাভঙ্গী অঙ্কিত করিবার জন্যই যেন আঁকিয়া-বাঁকিয়া বহুদূর পর্য্যন্ত প্রসর্পিত হইয়াছে। কিন্তু জিজ্ঞাসা কবি, ইহাতে লাভ কি? বাহিরের বিস্তীর্ণ মরুক্ষেত্রেরই

 চতুষ্কন চতুস্তম্ভযুক্ত মণ্ডপ। বোধ হয় এই ফার্সি শব্দ (Kiosk) “চতুষ্কশব্দেরই অপভ্রংশ। Kiosk= girlen summer-house অর্থাৎ “হাওয়া-খানা"। অনুবাদ।