পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
২০৯

 কিন্তু এখানে একটি ক্ষুদ্র জিনিষ দেখিলাম, যাহা বাহিরের সমস্ত ভীষণ পদার্থ অপেক্ষাও বিস্ময় উৎপাদন করে, চিত্তকে আকুল করে, সমস্ত স্থানটিকে তমসাচ্ছন্ন করিয়া তুলে। বেদির ক্ষয়িত প্রস্তরের উপর চকচকে মর্মর পাথরের একটা ছোট কালো নুড়ি,—দীর্ঘডিম্বাকৃতি- খাড়া হইয়া রহিয়াছে; তাহার প্রত্যেক পার্শ্বে, বেদির উপর, সেই সব শৈবচিহ্ন উৎকীর্ণ রহিয়াছে, যাহা শৈবগণ প্রতিদিন প্রভাতে স্বকীর ললাটে ভস্ম দিয়া অঙ্কিত কবে। চারিধারের সমস্ত পদার্থ দোয়ায় কালো হইয়া গিয়াছে। দেবালয়েব যে সব কুলুঙ্গিতে পুণ্যদীপ রক্ষিত হয়, সেই সব কুলুঙ্গিতে এক প্রকার কালো ঘন ঝুল জমিয়া গিয়াছে। দীপের পোড় সলিতাগুলা—যাহা সরাইয়া ফেলিতে কেহই সাহস করে না—দীপ হইতে ঝরিয়া-ঝরিয়া কুলুঙ্গির ভূমিকে তৈলাক্ত করিয়া তুলিয়াছে। এখান কার সমস্তই দীন-হীন-মলিন;—সমস্তই সেই ভীষণ ধর্ম্মানুষ্ঠানের নিদর্শন।

 এই কালো নুড়িটিই সকলের কেন্দ্রস্থল; অলৌকিকশ্রমসাধ্য এই সব খনন ও খোদন কার্যের ইহাই একমাত্র হেতু ও মূলকারণ। কোন-এক দেবতা কেবল সংহাব কবিবার জন্যই ক্রমাগত জীব উৎপাদন করিতেছেন -এই ভাবটি পূর্ধ্বতন ভারতবাসিগণ সংহতভাবে ও বিশদরূপে প্রকাশ করিবার জন্য যে সাঙ্কেতিক চিহ্নের কল্পনা করিয়াছিলেন, তাহা অতীব অপূর্ধ্ব। ইহাই শিবলিঙ্গ; ইহা জননক্রিয়ার সাঙ্কেতিক প্রতিরূপ। কিন্তু এই প্রকার জননে মরণেরই উদরপূর্ত্তি হইয়া থাকে।

 এই ভীষণ গুহাগর হইতে ফিরিয়া গিয়া যেখানে আমি নিদ্রা গিয়াছিলাম, সেই পান্থশালা হইতে বাহির হইয়াই দেখিলাম,—যে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড সমুদ্রের মূর্তি ধাৰণ করিয়া আছে, তাহা ক্ষীণরেখায় আমার সমক্ষে প্রসারিত। এক প্রকার কুজ্জটিকার ন্যায়, ধূলার অবগুণ্ঠনে আচ্ছাদিত হওয়ায়, সূর্যোদয়ের পূর্বে এই স্থানটি একটু নীলাভ ও বাষ্পবৎ অস্পষ্ট বলিয়া বোধ হইতেছে।