পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

কাটা। পুরু ধূলার স্তরের উপর, এখনো কতকগুলা শ্যামবর্ণ মনুষ্যের গাদা রহিয়াছে;—যেন ভস্মরাশির মধ্যে নিমজ্জিত। পুষ্পচিত্র-বিভূষিত এই সুন্দর গোলাপী রঙের প্রাচীরের সম্মুখে উহাদিগকে আরো কদাকার দেখাইতেছে। দেখিলে মনে হয়, যেন অস্থিপঞ্জরের উপর একখণ্ড শুকানন চাম্‌ড়া লাগাইয়া দেওয়া হইয়াছে। হাড়গুলা যেন স্পষ্ট করিয়া গোণা যায়। হাঁটু ও কনুয়ের গাঁট যেন একএকটা মোটা গোলা;—লাঠির গাঁঠের মত। উরতে শুধু একটা হাড়—নীচের জঙ্ঘা অপেক্ষা শীর্ণ; জঙ্ঘাতেও দুইটি অস্থিখণ্ড ছাড়া আর কিছুই নাই। উহাদের মধ্যে কতকগুলা লোক এক পরিবারের মত দলবদ্ধ হইয়া আছে; কতকগুলা বিচ্ছিন্নভাবে ইতস্তত রহিয়াছে। কেহ বা দুই হাত ছড়াইয়া মাটির উপর পড়িয়া যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতেছে; কেহ বা বোবার মত, স্থাণুর মত, উবু হইয়া নিশ্চলভাবে বসিয়া আছে; চোখগুলা জ্বরবিকারগ্রস্ত রোগীর ন্যায়; লম্বা-লম্বা দাঁত ঠোঁট হইতে বাহির হইয়া পড়িয়াছে—ঠোঁট পিছনে হটিয়া গিয়াছে। এক কোণে—একটি মাংসহীন জীর্ণশীর্ণ বৃদ্ধা ছেঁড়া ন্যাক্‌ড়ার উপর বসিয়া নীরবে ক্রন্দন করিতেছে। বোধ হয়, এ সংসারে তাহার আর কেহ নাই।

 এই দ্বারযুগল যেই পার হইলাম, অমনি নগরের অভ্যন্তরদেশ আমার সমক্ষে সহসা প্রকাশিত হইল। আমি এরূপ দেখিব বলিয়া আদৌ প্রত্যাশা করি নাই। কি আশ্চর্য্য কাণ্ড! কি ঐন্দ্রজালিক ব্যাপার!

 একটা বৃহৎ নগর সমস্তই গোলাপী;—উহার প্রাকারাবলী উহার দেবালয়, উহার গৃহাদি, উহার কীর্ত্তিস্তম্ভ—সমস্তই গোলাপী; সমস্তের উপর একই রকম শাদা ফুলের নক্‌সা। রাজার এ কি অদ্ভুত খেয়াল! দেখিলে মনে হয়, ভারতীয়-ধরণের ফুলের নক্‌সা-কাটা যেন একটি অখণ্ড প্রাচীর বরাবর প্রসারিত। মনে হয়, যেন অষ্টাদশ শতাব্দীর কোন পুরাতন ‘‘একরঙা” নগর। কিন্তু এখানে সমস্ত মিলিয়া তাহা