পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

হানি হয়, এইজন্য হাতীও মাতৃসুলভ সতর্কতার সহিত একটার পর আর-একটা পা অতি সন্তর্পণে ফেলিতে লাগিল।

 আমার স্মরণ হয়, যখন এমন-একটা সরু রাস্তা দিয়া চলিয়াছি, যেখানে হাতীর দুই পাশ দুইদিক্‌কার দেয়াল ঘেঁষিয়া যাইতেছে, তখন হঠাৎ একটা ঝাঁকানি হইল, হাতী সহসা থামিয়া পড়িল।

 আমাদের হাতী অপেক্ষাও বড় আর একটা দাঁতালো পুরুষ-হাতী বিপরীত দিক্‌ হইতে ঠিক্‌ আমাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িল।…

 আমাদের হাতীটা ক্ষণেকের জন্য যেন কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িল। কিন্তু তাহার পরেই সৌজন্যসহকারে দুইজনের মধ্যে কি-একটা পরামর্শ হইয়া গেল। এক হস্তিশালাতেই দুইজনে একত্র বাস করে; এক পাত্র হইতেই দুইজনে একসঙ্গে আহার করে,—সুতরাং উভয়েই উভয়ের সুপরিচিত। পরিশেষে অন্য হাতীটা ত্রিশ-পা পিছু হটিয়া একটা প্রাঙ্গণের মধ্যে প্রবেশ করিল,—যাইবার সময় আমাদের গায়ে শুধু একটু শুঁড় বুলাইয়া গেল। তাহার পর আমরা আবার চলিতে লাগিলাম।


রাজাদের শৈলনিবাস।

 ভারতের এই উদাস মরুদৃশ্যের উপর ভাস্বর ও বিষণ্ণ মধ্যাহ্ন ক্রমশ অগ্রসর হইতেছে। হস্তী শান্তভাবে পর্ব্বতের উপরে উঠিতেছে; অতি-মানুষপ্রমাণ একটা খোদিত ঢালু-সিড়ি দিয়া হস্তী পর্ব্বতের পার্শ্বদেশে আরোহণ করিল। এই স্থানটি ভগ্নাবশেষে সমাচ্ছন্ন; যেন ইহা দেবতাদের—মন্দিরসমূহের—প্রাসাদ-সৌধাবলীর একটা প্রকাণ্ড সমাধিক্ষেত্র।

 সহজভাবে ও মৃদুভাবে যাহাতে উপরে উঠিতে পারে, এইজন্য হাতী বাঁকা-চোরা পথদিয়া চলিতেছে। তাহার দোদুল্যমান প্রকাণ্ড দেহপিণ্ডটা আমাদিগকেও মৃদুমৃদু দুলাইতেছে। তাহার “গোদা-পায়ের” প্রতি পদক্ষেপে ধূলারাশি যেরূপভাবে নিষ্পেষিত হইতেছে, তাহাতেই তাহার