পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৭৭

প্রকাণ্ড শরীরের গুরুত্ব আমি বেশ অনুভব করিতে পারিতেছি। হাতী নিঃশব্দে চলিয়াছে; চারিদিক্‌ নিস্তব্ধ; কেবল তাহার দুই পার্শ্বে যে দুইটি রূপার ঘণ্টিকা ঝুলান রহিয়াছে, তাহা হইতে বিষণ্ণ-গম্ভীর ধ্বনি মধ্যে মধ্যে নিঃসৃত হইতেছে। কখন-কখন, উষ্ণ স্থির আকাশে উড়ন্ত পাখীর পক্ষোত্থিত শাঁই-শাঁই শব্দ শুনা যাইতেছে;—মাথার উপর দিয়া একটা শকুনি, একটা চিল চলিয়া গেল।

 পৰ্বতটা একেবারে খাড়া হইয়া উঠিয়াছে;—উহার উপরে উঠা কষ্টকর। পর্ব্বতের যে পাশে ‘খদ্‌’, তাহার উপর দিয়া দুর্গবপ্র-সমন্বিত একটা প্রাচীর প্রসারিত হইয়া ধূলিসমাচ্ছন্ন সূর্য্যরশ্মি-উদ্ভাসিত ধূসরবর্ণ দূর-দিগন্তকে বিখণ্ডিত করিয়াছে। পর্ব্বতের অপর পার্শ্বের উপর হইতে বিরাট্‌-আকৃতি পদার্থসকল দৃষ্টিগোচর হইতেছে; তিনশত ফিটেরও অধিক স্থান ব্যাপিয়া একটা গণ্ডশৈল—তাহার উপর দুর্গপ্রাসাদসমূহ অধিষ্ঠিত; সেরূপ সৌধপ্রাসাদাদি একালে নির্ম্মাণ করা দুঃসাহসের কাজ,—এক প্রকার অসাধ্য বলিলেও হয়। মাথা তুলিলেই দেখিতে পাওয়া যায়— এই সব প্রাচীনকালের প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড প্রাসাদ কতদূর পর্যন্ত চলিয়াছে, তাহার আর শেষ নাই; ইহাদের গঠনভঙ্গী আমাদের নিকট সম্পূর্ণ রূপে অপরিচিত; কত-কত শতাব্দী হইতে, এই সকল সৌধপ্রাসাদ অতলস্পর্শ খাতের ধারে অঘূর্ণিতমস্তকে অটলভাবে দণ্ডায়মান। এই নৈসর্গিক দুর্গশৈলের উপর কত-কত রাজবংশ—যাঁহাদের অস্তিত্বও এখন আমরা কল্পনা করিতে পারি না -ঐ উচ্চদেশে দুর্গম নিরাপদ আবাস স্থান নির্ম্মাণের জন্য কত সহস্র বৎসর হইতে প্রস্তরের উপর প্রস্তর রাশীকৃত করিয়াছেন। ভারতের সর্ব্বত্রই যেসব প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড ধ্বংসাবশেষ সমাকীর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার নিকটে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ভূপতিদিগের দুর্গপ্রাসাদাদি কি হাস্যজনক!

 হাতী থপ্‌থপ্‌ করিয়া মন্থরগমনে উপরে উঠিতেছে। মধ্যে মধ্যে