পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

সিদ্ধপুরুষ, যাঁহারা অষ্টসিদ্ধি লাভ করিয়াছেস, সেইরূপ কতকগুলি সন্ন্যাসীকে আমরা জানি। এ বিষয়েও আমাদের কথার উপরেই তোমার বিশ্বাসস্থাপন করিতে হইবে। সেরূপ সন্ন্যাসী এক সময়ে ভারতে ছিলেন, কিন্তু এই শতাব্দীর অবসানের সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁহারা তিরোহিত হইয়াছেন। ভারতের সেই পুরাতন যোগিভাব আর নাই। জড়বিজ্ঞানবাদী রাজসিক পাশ্চাত্য জাতির সংসর্গে আমাদের অবনতি হইয়াছে; পাশ্চাত্য লোকেরাও আবার এক সময়ে অবনতি প্রাপ্ত হইবে; এই অবনতির হস্তে আমরা নিশ্চিন্তভাবে আত্মসমর্পণ করিয়া দিয়াছি; কেন না, ইহাই জগতের অবশ্যম্ভাবী নিয়ম।… হাঁ, আমাদের দেশে সিদ্ধপুরুষ যোগিসন্ন্যাসী এক সময়ে ছিলেন; এই দেখ না, আল্‌মারির এই তক্তাটি শুধু তাঁহাদের বিবরণঘটিত হস্তলিপি পুথির জন্য সংরক্ষিত।”...

 জান্‌লা-শাশির উপর চিত্রিত মানবীয় সমস্ত ধর্ম্মসম্প্রদায়ের বিশেষ চিহ্নগুলি অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে, এই কঠোর পুস্তকাগারে একেই ত একটু বিষাদময় অন্ধকার ছিল, তাতে আবার রাত্রি হওয়ায়, আরো ঘোর অন্ধকারে ইহা আচ্ছন্ন হইল। থিওসফিষ্টদিগের সহিত দীর্ঘকাল বাস করিব মনে করিয়া আমি মাদ্রাজে আসিয়াছিলাম; কল্য হইতে তাঁহাদের গৃহে আমার থাকিবার কথা; কিন্তু আজ সায়াহ্নে আমি মাদ্রাজ ছাড়িয়া চলিয়া যাইব স্থির করিয়াছি, আর ফিরিয়া আসিব না। এই নাস্তিত্ব ও শূন্যবাদের কঠোর আশ্রমে বদ্ধ হইয়া থাকিব কিসের জন্য? বরং যেরূপ চিরজীবন করিয়া আসিয়াছি, এই পৃথিবীর বিচিত্র পদার্থ দেখিয়া আমার নেত্রবিনোদন করিব; এই পদার্থগুলি ক্ষণস্থায়ী হইলেও, অন্তত এক মুহূর্ত্তের জন্যও বাস্তব। তা ছাড়া, অমরত্বসম্বন্ধে তাঁহাদের যেরূপ ধারণা, সেরূপ অমরত্বের প্রমাণ পাইলেই বা কি যায়-আসে? একবার যাহারা বাস্তবিক ভালবাসিয়াছে, দেহের বিনাশ কল্পনা করাও তাহাদের পক্ষে বিষম যন্ত্রণা। যে অমরত্বে তাহারা সন্তুষ্ট, আমাদের মত লোক সেরূপ অমরত্ব লইয়া