পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

দাঁড়কাক আমার ঘরের জান্‌লায় বসিয়া, উদয়োন্মুখ সূর্য্যের সমক্ষে মৃত্যুগান গাহিয়া আমাকে জাগাইয়া দিল।

 অপরাহ্নে, বিদায় লইবার জন্য থিওসফিষ্টদিগের সহিত আবার সাক্ষাৎ করিতে গেলাম। থিওসফিষ্টদিগের দলপতি আমার পত্র পাইয়া সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়াছিলেন, তথাপি তিনি স্নেহপূর্ণ মধুরভাবে আমাকে আদরঅভ্যর্থনা করিলেন; আমি এরূপ অভ্যর্থনা প্রত্যাশা করি নাই।

 অনেকক্ষণ হস্তে হস্ত চাপিয়া তিনি বলিলেন—“খৃষ্টান, আমি ভাবিয়াছিলাম, তুমি বুঝি নাস্তিক!

 “বুদ্ধদেব আমাদের জন্য যে সকল জড়বিজ্ঞানবাদের উপদেশ রাখিয়া গিয়াছেন, আমি তোমার নিকট তাহারই ব্যাখ্যা করিয়াছিলাম; কেন না, সাধারণত এইরূপভাবেই আমরা আরম্ভ করি—তোমার আত্মার যেরূপ প্রকৃতি দেখিতেছি, তাহাতে তোমার পক্ষে গুহ্যাঙ্গের ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মই উপযোগী; আর সে গুহ্যতন্ত্র আমাদের অপেক্ষা আমাদের বারাণসীর বন্ধুগণ ভাল জানেন; তুমি যে প্রার্থনা-উপাসনাদির কথা বলিতেছিলে,—কোননা-কোন আকারে তুমি সেইখানেই তাহা প্রাপ্ত হইবে; কিন্তু শুধু প্রার্থনাউপাসনাদি করিলেই যথেষ্ট হইবে না, পুণ্যসঞ্চয় করিবার জন্যও তাঁহারা তোমাকে উপদেশ করিবেন—‘অন্বেষণ করিলেই প্রাপ্ত হইবে’; আমি ৪০ বৎসর যাবৎ অন্বেষণ করিয়াছি; তুমি সাহসপূর্ব্বক আরো কিছুকাল অন্বেষণ কর। আমাদের মধ্যে তুমি থাকিবার চেষ্টা কর;—না না, যাও! -আমাদের শিক্ষাদীক্ষা তোমার উপযোগী হইবে না।” তাহার পর একটু হাসিয়া বলিলেন—“তা ছাড়া, এখনো তোমার সময় আসে নাই; এখনো তুমি সংসারের ভীষণ মায়াপাশে আবদ্ধ।

 —“বোধ হয় তাই।”

 “তুমি অন্বেষণ করিতেছ, কিন্তু অন্বেষণ করিয়া পাছে তুমি কিছু পাও, সেজন্যও তোমার ভয় হইতেছে।”