পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগলবিভবের ধবল প্রভা।
৩০৭

দিগকে ফাঁসি দেওয়া হইত; এবং তাহার পর তাহাদের মৃতদেহ এমন একটা কূপের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইত—যাহার অন্তঃসলিল, নদীর সহিত মিশিয়া গিয়াছে; কতকগুলা অতলস্পর্শ কালো গর্ত্ত;—কতকগুলা সুড়ঙ্গ, যাহার ভিতর দিয়া যাইতে সাহস হয় না এবং যেখানে হয় অস্থিরাশি, নয় ধনভাণ্ডার লাভ করা যায়। উপরে যে অমল-ধবল প্রাসাদরূপ পদ্মটি ফুটিয়া আছে, তাহারই যেন তমসাচ্ছন্ন শিকড়গুলা মাটি ফুঁড়িয়া পাতালগভীরে প্রবেশ করিয়াছে।

 তমসাচ্ছন্ন আনুসঙ্গিক-ঘরগুলির উপর পুনর্ব্বার উঠিয়া, আবার সেই সব জালি-কাজকরা চতুষ্কমণ্ডপে ফিরিয়া আসিলাম;—এই সুক্ষ্ম-খোদিত চতুষ্কগুলি প্রাকারবপ্রের ধারে খাড়া হইয়া রহিয়াছে এবং উহাদের গবাক্ষগুলা ফাঁকায় বাহির হইয়া আসিয়াছে। আমি কতকটা গয়ংগচ্ছভাবে সেই সব দ্বার-গৃহে দাঁড়াইয়া রহিলাম—যেখানে অতীতকালের সুন্দরীরা কিংবা কৃত্রিম-পর্ব্বত-শিখরস্থ অবরুদ্ধ সুলতানারা, গগনবিহারী ভ্রাম্যমান বিহঙ্গদের ভ্রমণপথেরও ঊর্দ্ধদেশ হইতে, জালি-কাটা মার্ব্বেলফলকের মধ্য দিয়া কিংবা থামের ফাঁক দিয়া চতুদ্দিক্‌ নিরীক্ষণ করিতেন। এখানকার সমস্তই চারু-সূক্ষ্ম কারুকার্য্যে বিভূষিত; এখানকার সমস্ত খোদাইকার্য্যে ধৈর্য্যের পরাকাষ্ঠা লক্ষিত হয়; শাদা ‘জমির’ উপর মণিখচিত ছোট ছোট ফুল ইতস্তত ছড়ান রহিয়াছে; অন্যাংশ অপেক্ষা এই অংশটি আরো বেশী শাদা বলিয়া মনে হয়—সর্ব্বত্রই যেন একপ্রকার বিষাদের ধবল কিরণ বিচ্ছুরিত।

 আজ আমরা এখানকার যতটা উজাড়-ভাব দেখিতেছি, অবশ্য সেকালে সুলতানারা সে ভাব দেখেন নাই। তখনও এই সব সমভূমি গড়াইয়াগড়াইয়া অনন্তের মধ্যে বিলীন ছিল; তখনও এই একই নদী সুদূরে আঁকিয়া-বাঁকিয়া চলিয়াছিল, কিন্তু তখন উহার উপর দিয়া দুর্ভিক্ষের শুষ্কনিশ্বাস বহিয়া যায় নাই; তখন সমস্ত দেশ মৃত্যুর কুজ্ঝটিকায় আচ্ছন্ন