পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

উহা হইতে ধোঁয়া বাহির হইতেছে—কিন্তু আগুন জ্বলিতেছে না। এই চিতাগুলা অদ্ভুদ আকারের,—দীর্ঘ ও সরু। এইগুলা শবদাহের কাঠ। নদীর দিকে পা করিয়া প্রত্যেক শব আপন-আপন চিতাশয্যায় শয়ান; কাছে গিয়া দেখিতে পাইলাম, ডালপালার টুক্‌রার মধ্যে পায়েরবুড়ো-আঙুল কানি দিয়া জড়ান; কানি হইতে আঙুলটা একটু বাহির হইয়া রহিয়াছে—উঠিয়া রহিয়াছে। এই চিতাগুলা কি ক্ষুদ্রাকার; সমস্ত শরীরটা এত অল্প কাষ্ঠে দগ্ধ হয়!

 আমার নৌকার হিন্দু মাঝি আমাকে বুঝাইয়া দিল—“ও-সব গরিবদের চুলো। ওর চেয়ে ভাল কাঠ কিন্‌তে ওদের পয়সা জোটে না—তাই খারাপ ভিজে-কাঠ এনেছে।”

 এক্ষণে পূজা-অর্চ্চনার সময় উপস্থিত। মহাসমারোহে সান্ধ্যপূজার অনুষ্ঠানাদি আরম্ভ হইল। উত্তরীয়বস্ত্রে অবগুণ্ঠিত হইয়া ব্রাহ্মণেরা সোপান-ধাপ দিয়া নামিতে লাগিল; পবিত্র জল লইবার জন্য, স্নানের জন্য, এবং ব্রাহ্মণের অবশ্য-পাল্য কতকগুলি ধর্ম্মানুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য তারা সিঁড়ির নীচে পর্য্যন্ত নামিয়া আসিল; পাথরের ধাপগুলা, যাহা একেবারেই জনশূন্য ছিল, এক্ষণে নিঃশব্দে জনপূর্ণ হইল; সর্ব্বসাধারণের পূজা-অর্চ্চনার জন্য নদীর পারে অসংখ্য ডোঙা, প্রাসাদমন্দিরাদির ছায়াতলে অসংখ্য বাঁশের মাচা সাজান রহিয়াছে; এই সমস্ত বসিবার স্থান ভক্তজনে পূর্ণ হইয়া গেল; তাঁহারা সংযতচিত্ত হইয়া স্থিরভাবে ধ্যানাসনে উপবিষ্ট হইলেন। এবং অনতিবিলম্বেই, এই বিপুল জনতার চিন্তারাশি সেই অতলস্পর্শ পরপারের অভিমুখে উড্ডীন হইল—যাহার মধ্যে কিছুকাল পরে আমাদের সকলেরই এই ক্ষণস্থায়ী ‘অহং’গুলা বিলীন হইবে—তমসাচ্ছন্ন হইয়া পড়িবে।

 সেই শ্মশানকোণটিতে সেই ধূমায়মান তিনটি চিতার সন্নিকটে, কাপড়জড়ানো আরো দুইটি মনুষ্যমূর্ত্তি দেখা যাইতেছে—উহারা নদীর জলে