পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

দুইটি দীর্ঘায়ত চক্ষু মুদ্রিত—নেত্রপল্লব কৃষ্ণ পক্ষ্মরাজিতে বিভূষিত; ঋজু নাসিকা,—নাসিকার পার্শ্বদ্বয় সুকুমার; ফুল্ল কপোল; ওষ্ঠাধরের গঠন অতীব সুন্দর—ধবলকান্তি মুখের উপর ওষ্ঠদ্বয় অর্দ্ধোদ্ঘটিত হইয়া রহিয়াছে। রমণী যে পরমা সুন্দরী ছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই; যখন ইঁহার দেহ সবল-সুস্থ ছিল, পূর্ণ-যৌবনে ইঁহার রূপ ঢল্‌ঢল্‌ করিতেছিল, বোধ হয় সেই সময়ে হঠাৎ কোন রোগে আক্রান্ত হইয়া ইনি মৃত্যুগ্রাসে পতিত হন; তাই ইহার মুখে এখনো বিকৃতির লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। তা ছাড়া, ইনি যে লাল বস্ত্রখণ্ডে আচ্ছাদিত, তাহা জলে ভিজিয়া স্বচ্ছ হইয়া উঠিয়াছে এবং উহার বক্ষ ও কটিদেশের উপর এমন আঁটিয়া ধরিয়াছে যে, উঁহার সৌন্দর্য্যকে যথেষ্টপরিমাণে ঢাকিয়া রাখিতে পারিতেছে না।…এই সৌন্দর্য্যরাশি কতকগুলা স্থূলরুচি বাহকের হস্তে সমর্পণ করা হইয়াছে এবং মুহূর্ত্তের মধ্যে সমস্তই ধ্বংস হইয়া যাইবে।...আর যে দুইজনের শব সেখানে অপেক্ষা করিতেছিল, তাহার মধ্যে একজনের পালা এইবার উপস্থিত; ইহা একজন পুরুষের শব, শাদা মলমলে আচ্ছাদিত; পবিত্র জলে স্নান করাইয়া, তাহাকেও চিতার উপর রাখা হইল। ইহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এখনো কঠিন ও আড়ষ্ট হইয়া যায় নাই; মুহূর্ত্তের জন্য উহার মস্তক একবার ডাইনে ও একবার বামে ঢলিয়া পড়িল; তাহার পর, কাষ্ঠউপাদানের উপর একেবারে স্থির হইয়া রহিল; ডালপালায় উহাকে আচ্ছাদিত করিয়া, পায়ের দিকে আগুন ধরান হইল। সেই ছোট বালকটির মৃতদেহ এখনো দাহ হইতেছে; তাহার কৃষ্ণাভ ধূমরাশি তাহার সেই জনকজননীর দিকে উড়িয়া আসিতেছে;—সেই অচলমূর্ত্তি দুইটি প্রাণী, যাহারা একদৃষ্টে তাহার দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে।

 এইবার পাখীদের শয়নকাল নিকটবর্ত্তী; ভারতে, বিশেষত বারাণসীতে পাখীদের গৌরব চিরকালই খুব বেশী; দাঁড়কাকের মৃত্যুকে ডাকিতেছে, পায়রার ঝাঁক, পাণ্ডুবর্ণ আকাশতলে যাতায়াত করিতেছে; এবং প্রত্যেক