পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিতাসজ্জা।
৩২৭

কুলায় এবং পাছে দাহের পর দাহকেরা শবের অদগ্ধ অংশ গঙ্গায় নিক্ষেপ করে।

 বড়-বড় উজ্জ্বল নক্‌সা-কাটা একটা লাল মল্‌মল্‌বস্ত্রে এই শবের দেহ আচ্ছাদিত; এবং উহার কটিদেশে কতকগুলা শাদা ও লাল ফুল গোঁজা। ইহা যে একটি রমণীমূর্ত্তি, প্রথমত এই পুষ্পসজ্জাতেই তাহা জানা যায়; তা ছাড়া, মৃত্যুর হিমময়-বিকৃতাবস্থা-সত্ত্বেও পাত্‌লা কাপড়ের ভিতর দিয়া উহার নারীসৌন্দর্য্য দিব্য প্রকাশ পাইতেছে! আমার মাঝি বলিল—“উনি একজন ধনিলোকের মেয়ে; দেখ না, ওঁর জন্য কেমন খাসা কাঠ আনা হয়েছে।”

 এই শবের দাহ দেখিবার প্রতীক্ষায়, এই গঙ্গার উপর,—এই আবিল, পীতাভ, পঙ্কিল জলের উপর আমার নৌকা থামাইলাম,—যে জল তৃণাদিতে, আবর্জ্জনারাশিতে, ফুলের পাপ্‌ড়িতে, ফুলের মালায় নিত্য আচ্ছন্ন এবং যাহা হইতে পচাগন্ধ নিয়ত উচ্ছ্বসিত হইতেছে। গোলাপ, রজনীগন্ধ, বিশেষত হল্‌দেফুল গাঁদা, কুঁদফুলের মালা প্রভৃতি যাহা এই পবিত্র বৃদ্ধা গঙ্গার বক্ষে পুষ্পাঞ্জলিরূপে প্রতিদিন নিক্ষিপ্ত হয়—এই সমস্ত ফুল জলের উপর ভাসিতেছে, গাঁজিয়া উঠিতেছে। ধবল ফেনপুঞ্জ, কিনারায় সঞ্চিত কাদার ফেনা, তাহার উপর ছড়ান গাঁদাফুল—ইহার সহিত মনুষ্যবিষ্ঠা মিশ্রিত হইয়া সমস্তই পচিয়া উঠিয়াছে।

 শববাহকেরা, একটা পরিত্যক্ত জঘন্য জিনিষের মত এই সুন্দরীর মৃতদেহকে লইয়া নীচে নামিতেছে; যখন একেবারে জলের ধারে আসিল—আমার খুব নিকটে আসিল,—অন্তর্জলীর জন্য শবকে জলের মধ্যে নিমজ্জিত করিল; এবং উহার মধ্যে একজন লোক শবের উপর ঝুঁকিয়া জন্মের মত শেষবার তাহার মুখটি দেখিয়া লইল এবং অন্ত্যেষ্টির পদ্ধতি অনুসারে করতলে একটু গঙ্গাজল লইয়া তাহার মুখের মধ্যে ঢালিয়া দিল। সেই সময়ে আমি দেখিতে পাইলাম—