পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিতাসজ্জা।
৩৩১

পর, ক্ষণকাল নিস্তব্ধ,—এই নিস্তব্ধতার সময়ে কাক একবার ডাকিয়া গেল—তাহার পরেই আবার একটা তান যেন উতরের মত অন্য এক প্রাসাদ হইতে আসিয়া পৌঁছিল। তা-ছাড়া, ঢাকঢোলের বাদ্যও শুনা যাইতেছে—যেন গুহাগহ্বরের মধ্য হইতে আওয়াজ বাহির হইতেছে। আর যেন খুব বিলম্বে-বিলম্বে ঢাকের উপর ঘা পড়িতেছে।...ঐ অতি উচ্চে, অতি দূরে, ঐ সমস্ত সঙ্গীতের রহস্যময় অনির্দ্দেশ্য বিষণ্ন সুর আমার মাথার উপর দিয়া চলিয়া যাইতেছে—এদিকে, এই নীচে জলের উপর আমার নৌকা মৃত্যু আঘ্রাণ করিতে করিতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছে! আমার নিকট এই সমস্ত বাদ্যধ্বনি যেন সেই তরুণীর মৃত্যুজনিত শোকসঙ্গীত। সেই মৃত্যুর দৃশ্যই অষ্টপ্রহর আমার মাথায় যেন ঘুরিতেছে,—আমার কল্পনায় জাগিতেছে। আমার নিকট ইহা শোকসঙ্গীত বলিয়া মনে হইতেছে—আরো অন্যলোকের জন্য, যাহারা আর নাই—আরো অন্য জিনিষের জন্য, যাহা আর নাই।

 যেমন আমি মনে করি নাই,—এই পবিত্র নগরীতে আসিয়া ধূসর আকাশ দেখিব, শীতের ভাব দেখিব, সেইরূপ ইহাও ভাবি নাই—আমার মনের ভাব পূর্ব্বের মতই থাকিবে,—পূর্ব্বেরই মত জীবজগতের ও বাহ্যজগতের নবনব সৌন্দর্য্যে বিমুগ্ধ হইব। বারাণসী—যাহার দ্বিতীয় নাই—যাহা ধর্ম্মের কেন্দ্রস্থল, যাহা পৃথিবী হইতে বিচ্ছিন্ন একটি বৃহৎ দেশের হৃদয়,—সেই বারাণসীতে আসিয়া, সাধুদের সংসর্গে ও তাঁহাদের প্রসাদে আমারও কিছু বৈরাগ্য জন্মিবে, আমিও কিছু শান্তি পাইব—এই আমার আশা ছিল। সাধুরা কৃপা করিয়া আমাকে গুহ্যধর্ম্মে অল্পস্বল্প দীক্ষা দিবেন বলিয়া অঙ্গীকার করিয়াছেন—এই দীক্ষার অনুষ্ঠান কল্য হইতে আরম্ভ হইবে। কিন্তু দেখ, এইখানে আসিয়া,—যাহা-কিছু দেখিতে সুন্দর, যাহা কিছু ভৌতিক, যাহা-কিছু মায়াময় ও মৃত্যুর অধীন, তাহাতেই যেন আমি পূর্ব্বাপেক্ষা আরো অধিক আসক্ত