পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বারাণসীতে যদৃচ্ছাভ্রমণ।
৩৫৩

হয়। আধুনিক জগতের সহিত যেন আপে খাপ খায় না। কিন্তু ইহাদের সূক্ষ্ম চিন্তা-কল্পনা আমাদের চিন্তা-কল্পনাকে ছাড়াইয়া যায়, এবং বিশুদ্ধ ও উন্নততর আধ্যাত্মিক রাজ্যে, উহারা আমাদের মস্তিষ্কহীন অপদার্থ লোকদিগের অপেক্ষা যে কত উচ্চস্থান অধিকার করে, তাহা বলা যায় না; অথচ আমাদের কোন কোন উচ্চপদধারী গণ্ডমুর্খ, উহাদের মুখের উপর চুরুটের ধম ফুৎকার করিতেও কুণ্ঠিত হয় না।...

 বারাণসীতে, ধ্যানধারণা পূজা-অর্চ্চনার এমন একটা পুণ্যপ্রভাব চতুর্দ্দিকে বিরাজমান যে, সহজেই অন্তরাত্মা ঊর্দ্ধে উন্নীতহয়,—এই কথা সেই নিস্তব্ধ ক্ষুদ্রগৃহের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলিয়াছিলেন; তাঁহাদের কথাটা খুবই সত্য; এখানে প্রথমে যে আইসে, কিছুদিন পরে সে আর সে লোক থাকে না। অথচ এখানকার বিচিত্র পার্থিব মায়াদৃশ্য যেরূপ চিত্তবিমোহন, এমন আর কোথাও নহে; এখানকার আকৃতির সৌন্দর্য্য যেরূপ চিত্তচাঞ্চল্যকর—রূপের সৌন্দর্য্য যেরূপ চিত্তলোভন, এমন আর কোথাও নহে; একদিকে পৃথিবীর আহ্বান, অপর দিকে স্বর্গের আহ্বান—এই দুয়ের মধ্যে সংগ্রাম বাধিয়া চিত্ত যেন কেন্দ্রচ্যুত হইয়া পড়ে।

 সকল দেবালয়েই পুণ্যশঙ্খ নিনাদিত হইতেছে, ঝটিকার রোলে প্রকাণ্ড ঢাক-ঢোল বাজিতেছে; প্রভাত ও সন্ধ্যায়,—লোহিত মন্দিরচুড়ার চারিধারে ‘জলদবৎ পরিব্যাপ্ত কাকদিগের চিরন্তন কা-কা-রবকে আচ্ছন্ন করিয়া পূজার বাদ্যকল্লোল সমুত্থিত হইতেছে।

 সেই দুর্গা—সেই ভীষণদর্শন করালী দেবী কালীরও মন্দির এই পুণ্যনগরীতে প্রতিষ্ঠিত আছে; মন্দিরটি ঘোর রক্তবর্ণ;—শোণিতের বর্ণ;—যে শোণিতপানেও তাঁহার পিপাসার শান্তি হয় না; হতজীবের পূতিগন্ধে সমস্ত মন্দির পরিব্যাপ্ত; মন্দিরের সানে বীভৎস রক্তের দাগ; কেন না, এখনও বলিদান চলিতেছে। ক্ষুদ্র গঠনহীন কালীমূর্ত্তি মন্দিরদালানের ভিতরদিক্‌কার একটা কুলুঙ্গির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। মূর্ত্তিটি কৃষ্ণবর্ণ,