পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

স্থানটি—য়ুরোপীয়-ধরণের। বরাবর ইহাই আমার নিকট অসঙ্গত ও বিসদৃশ বলিয়া মনে হয়। আমার মনে হয়, এই পরমাশ্চর্য্য প্রাচীন হিন্দুস্থানের উদার হৃদয়ের ইহাই একটি মার্জ্জনীয় ত্রুটি।

 ত্রিবঙ্কুরে এই-যে প্রথম রাত্রি আমি অতিবাহিত করিতেছি, এই রাত্রির শেষভাগে আমার ছাদের উপর একটা ভীষণ কোলাহল উপস্থিত। হুড়াহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি, তাহার পর লড়ালড়ি। আমার নিবাসগৃহ চারিদিকে খোলা,—এই মনে করিয়া আমার মনের মধ্যে সর্ব্বদাই একটা অস্পষ্ট উদ্বেগের ভাব ছিল। এখন যেন আমি আধো-ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিতে পাইলাম, কতকগুলা বড়-বড় বিড়াল লম্ফঝম্ফ দিয়া কর্কশস্বরে চীৎকার করিতেছে। রাত্রির নিস্তব্ধতাহেতু ও গৃহের মধ্যে কাঠের কাজ অধিক থাকায়, বেশি শব্দ হইতেছে বলিয়া মনে হইতেছিল। আসলে উহা পার্শ্ববর্ত্তী স্থানের বনবিড়ালের পদশব্দ ভিন্ন আর কিছুই নহে। সমস্তদিন উহারা উদ্যানস্থ বৃক্ষের উপরে নিদ্রা যায়; রাত্রিকালে শিকারে বাহির হইয়া আত্মবিনোদন করে এবং ধৃষ্টতাসহকারে মনুষ্যরাজ্য আক্রমণ করে।

 অতি প্রত্যুষে, ত্রিবন্দ্রমে আমার মনে একটা বিষাদের ভাব আসিয়া উপস্থিত হইল। ঊষার প্রথম প্রারম্ভেই, ভীষণ একটা শোকসূচক কোলাহল উত্থিত হইল। শব্দটা যেন একটু দূর হইতে আসিতেছে,—ব্রাহ্মণ্যের সেই পূতভূমি হইতে আসিতেছে বলিয়া মনে হইল। হাজারহাজার লোক একসঙ্গে চীৎকার করিয়া উঠিতেছে; উহা যেন সমস্ত মানবমণ্ডলীর আর্তনাদ; বিশ্বমানব যেন জাগ্রত হইয়াই আবার সেই চিরন্তন পৃথিবীর দুঃখকষ্ট অনুভব করিতেছে—মৃত্যুচিন্তার ভারে নিষ্পেষিত হইতেছে। তাহার পরেই, বিহঙ্গেরা নব-ভানুকে অভিবাদন করিতে প্রবৃত্ত হইল; কিন্তু বসন্তকালে উহারা আমাদের ফল-বাগানে যেরূপ মৃদু-লঘু-ধরণে সুমধুর প্রভাতী গাহিয়া থাকে, ইহাদের সঙ্গীত সেরূপ নহে।

 এখানে, ‘নকুলে’ টিয়াপাখীর স্থূল কণ্ঠস্বরে—বিশেষত কাকের শোক-