পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৪৫

নিকটবর্ত্তী স্থানে আশ্রয় লইয়াছে।—গরু, ভ্যাড়া, ছাগল, ঘোড়, এই সকল জীব জন্তু। আমাদের গমনকালে উহারা জাগিয়া উঠিল না। বালুকাময় রাস্তা দিয়া আমাদের গাড়ি চলিয়াছে। গাড়ির চাকার মৃদু শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ শুনা যাইতেছে না। এই সকল বাড়ী, নিদ্রিত পশুর পাল, নিষ্পন্দ পদার্থসমুহ, যেন কোন দূরবর্ত্তী রং-মশাল-আলোকের আভার ন্যায়, একপ্রকার অস্পষ্ট নীল আলোকে পরিস্নাত।

 আমাদের সম্মুখে একটা প্রকাণ্ড ঘের, একটা উত্তুঙ্গ তোরণ—শ্রেণীবদ্ধ, লণ্ঠনের আলোকে দেখা যাইতেছে। এই তোরণের মধ্য দিয়া একটা বিস্তৃত জনশূন্য, তরুবীথি সিধা চলিয়া গিয়াছে। প্রাচীরের ঊর্দ্ধে তালবৃক্ষাদি ও প্রাসাদের ছাদ, এবং দূরপ্রান্তে, তরুবীথির কেন্দ্রস্থলে ও পশ্চাদ্ভাগে, ব্রাহ্মণ্যিক মন্দিরের চূড়াসকল দেখা যাইতেছে। স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে, এইবার আমরা ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের রাজধানী—প্রকৃত ‘ত্রিবন্দ্রম’-নগরে প্রবেশ করিতেছি। পূর্ব্বে যেখানে নিদ্রিত-জীবজন্তু-সমাচ্ছন্ন নীলাভ রাজপথ দেখিয়াছিলাম, উহা ইহারই সংলগ্ন উপনগরমাত্র।…

 আমি জানিতাম না, এই পুণ্য ঘেরের মধ্যে কেবল উচ্চবর্ণের হিন্দুদিগেরই বাসাধিকার আছে। আমি মনে করিয়াছিলাম, বুঝি আমার গাড়ি পূর্ব্বোক্ত বৃহৎ তোরণের মধ্য দিয়া প্রবেশ করিবে; কিন্তু তাহা না করিয়া হঠাৎ ডানদিকে ফিরিল; আবার আমরা তরু-অন্ধকারে নিমজ্জিত হইলাম। আরো দূরে লইয়া-গিয়া, নানা রাস্তা অনুসরণ করিয়া, উপবনের অলিগলির মধ্য দিয়া, অবশেষে উদ্যানমধ্যস্থিত একটা সুন্দর অট্টালিকার সম্মুখে আমাকে আনিয়া উপস্থিত করিল। কিন্তু হায়! অট্টালিকার মুখশ্রীটি ভারতীয়-ধরণের নহে।

 এইখানেই আমার জন্য ঘর নিদ্দিষ্ট হইয়াছে। এইখানেই, মহারাজার পক্ষ হইতে আমার প্রতি যার-পর-নাই আদর অভ্যর্থনা ও আতিথ্য বিতরিত হইবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, উহার বাহ্য ‘কাঠাম’টি—আতিথ্যের