পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৪৯

মহারাজার হস্তিগণ, কোনো মেঠো কাজ সমাধা করিয়া, চিন্তামগ্ন হইয়া, ফিরিয়া আসিতেছে; উহারা হস্তিশালায় গিয়া এইবার নিদ্রা যাইবে। ইহার পর, আর কিছুই শুনা যায় না। কেবল যে সকল জীব স্বকীয় স্বাভাবিক গতির উন্মত্ত উচ্ছ‌্বাসে সর্ব্বদাই চঞ্চল, সেই তরুনিবাসী চটুল কাঠবিড়ালীরা চারিদিক্‌কার নিস্তব্ধতায় সাহস পাইয়া আমার কক্ষে প্রবেশ করিয়াছে।

 সায়াহ্নে, যখন মনুষ্যের চেষ্টা-উদ্যম আবার আরম্ভ হইল, তখন আমার গৃহ হইতে বাহির হইয়া মহারাজার গাড়িতে আমি আরোহণ করিলাম। অশ্বদিগের দ্রুতগতিতে আমার মনে যেন একটা শৈত্যবিভ্রম উপস্থিত হইল।

 এখন, ত্রিবন্দ্রম-নগরের আর-এক নূতন বিভাগ আমার চতুষ্পার্শ্বে প্রসারিত। এখন আর বৃক্ষের আধিপত্য নাই,—শাদ্বলভূমি উহাদের স্থান অধিকার করিয়াছে,—কতকগুলি বালুকাকীর্ণ সুন্দর বীথি প্রস্তুত হইয়াছে। আধুনিক-ধরণের রাজধানীতে যে সকল দ্রষ্টব্য বস্তু থাকা আবশ্যক, সে সমস্তই উদ্যানসমূহের অভ্যন্তরে বিকীর্ণ রহিয়াছে:— মন্ত্রণাভবন, আতুরাশ্রম, কর্জ্জ-কুঠী, বিদ্যালয়। এ সব জিনিস তত বেসুরো-বেখাপ্পা বলিয়া মনে হইত না,—যদি একটু ভারতীয়-ধরণে গঠিত হইত; কিন্তু, আমাদের এই বর্ত্তমান যুগে, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এই একই প্রকারের রুচিদোষ দৃষ্ট হয়। এ ছাড়া, এখানে প্রটেসটাণ্ট, ল্যাটিন ও সিরিয়া সম্প্রদায়ের বিবিধ খৃষ্টান গির্জাদিও আছে। এই সিরিয়া সম্প্রদায়ের গির্জাগুলি সর্ব্বাপেক্ষা পুরাতন এবং উহাদের সম্মুখভাগের আকৃতিটি নিতান্ত সাদাসিদা-ধরণের। কিন্তু সে যাহাই হোক, এ সমস্ত দেখিতে আমি ত্রিবঙ্কুরে আসি নাই। এখন আমি বুঝিতেছি, ব্রাহ্মণভারতের—রহস্যগভীর ভারতের সংস্পর্শে আসা কতটা কঠিন,—যদিও সেই জীবন্ত ভারত, সেই অপরিবর্ত্তনীয় ভারত আমার খুব নিকটেই রহিয়াছে বলিয়া