পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৫৯

 উহারা তাম্রতন্ত্রীযুক্ত বড় বড় বাদ্যযন্ত্র সঙ্গে আনিয়াছেঃ প্রকার বিরাট “ম্যাণ্ডলিন্” কিংবা “গিতার”। যন্ত্রগুলির ডাণ্ডি বাঁকিয়াগিয়া একপ্রকার বিরাট্-আকৃতি জন্তুবিশেষের মস্তকে পর্য্যবসিত হইয়াছে।এই “গিতার”-গুলি বিভিন্নপ্রকারের এবং উহা হইতে বিভিন্নপ্রকারের স্বর নিঃসৃত হইবার কথা। কিন্তু সকলগুলিরই স্বরকোষ প্রকাণ্ড এবং স্বরের রেস্ বৃদ্ধি করিবার জন্য যন্ত্রগুলির গায়ে ফাঁপা তুম্বসকল রহিয়াছে;—মনে হয়, যেন একটি তরুকাণ্ডের গায়ে বড়-বড় ফল ফলিয়া রহিয়াছে। এই যন্ত্রগুলি রং-করা, গিণ্টি-করা, হাতীর-দাঁতের কাজ-করা, বহু পুরাতন, সম্পূর্ণরূপে শুষ্কীকৃত, শব্দযোনি ও বহুমূল্য দুর্লভ জিনিষ। কেবলমাত্র উহাদের বিচিত্র আকৃতি ও অদ্ভুত গঠন দেখিয়াই আমার মনে রহস্যময় ভাব—ভারতসংক্রান্ত রহস্যময় ভাব জাগিয়া উঠিল। বাদকেরা হাসিমুখে যন্ত্রগুলি আমাকে দেখাইতে লাগিল। উহাদের মধ্যে কতকগুলি যন্ত্র অঙ্গুলীর দ্বারা, কতকগুলি ছুড়ের দ্বারা ও কতকগুলি ঝিনুকের দ্বারা বাজাইতে হয়। আর-একপ্রকার যন্ত্র আছে—তাহার তারের উপর কালো ডিম্বাকার একটুকরা আবলু্শ্-কাষ্ঠ বুলাইয়া বাজাইতে হয়। বাদনের কি সূক্ষ্ম ভেদ! এই সকল সূক্ষ্মভেদ আমাদের পাশ্চাত্য সঙ্গীতবিদ্যার অগোচর!

 তা ছাড়া, কতকগুলি “টম্টম্”বাদ আছে, সেগুলি বিভিন্ন সুরে বাঁধা। আবার, কতকগুলি বালক-গায়ক আসিয়াছে; উহাদের পরিচ্ছদ বিশেষরূপে জমকালে ও বিলাস-জৃন্তৃত। আমার জন্য, সঙ্গীতকার্য্যের যে অনুক্রম-পত্র ছাপা হইয়াছে, উহার একখণ্ড আমার হস্তে উহারা অর্পণ করিল। গায়ক-বাদকদিগের শ্রুতিমধুর অদ্ভুত নাম উহাতে লেখা রহিয়াছে—সকল নামগুলিই প্রায় দ্বাদশ-পদাক্ষরের।

 পাঁচটা বাজিল। গায়ক-বাদকের দল সব-সুদ্ধ প্রায় পঁচিশ জন। উহারা গালিচার উপর আসীন। যে বৈঠকখানা-ঘরে উহারা বসিয়াছে, সেই ঘরের মধ্যে এখনি যেন সন্ধ্যার ছায়া পড়িয়াছে। দোলার দোলনবৎ অলসভাবে