পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

“পাঙ্খা” চলিতেছে। এইবার সঙ্গীতের আলাপ শুরু হইবে; কেন না, যন্ত্রের অগ্রপ্রান্তস্থ পশুমুর্তিগুলা খাড়া হইয়া উঠিয়াছে। এই প্রকাণ্ড যন্ত্রগুলি হইতে না-জানি-কি ভয়ানক শব্দ—এই “টমটম”-গুলি হইতে না-জানি-কি ভীষণ কোলাহলই সমুথিত হইবে। আমি প্রতীক্ষা করিয়া আছি-একটা তুমুল শব্দ শুনিব বলিয়া প্রস্তুত হইয়া আছি। গায়কৰাদকদিগের পশ্চাদ্ভাগে একটা খিলানাকৃতি দ্বার উন্মুক্ত; তাহার পরেই একটা শাদা প্রবেশ- দালান। সেই দালানে অস্তমান সূর্য্যের একটি কনকরশ্মি প্রবেশ করিয়া মহারাজার একদল সৈন্যের উপর নিপতিত হইয়াছে। শোভার্থ সজ্জিত এই সৈনিকমূর্ত্তিগুলি ব্যাথায় লাল পাগ্ড়ি পরিয়া, রক্তিম সূর্য্যালোকে দণ্ডায়মান। এদিকে, গায়কবাদকের দল ঘোর-ঘোর অস্পষ্ট ছায়ার মধ্যে নিমজ্জিত।

 উহাদের সঙ্গীত কি আরম্ভ হইয়াছে? হাঁ, বোধ হয় আরম্ভ হইয়াছে। কেন না, দেখিতেছি, উহারা গম্ভীরভাব ধারণ করিয়াছে। কিন্তু কৈ, কিছুই ত শুনা যাইতেছে না।... না না—ঐ যে...একটি ক্ষুদ্র তার-গ্রামের সুর-কদাচিৎ শ্রুতিগ্রাহ্য—“লোহেন্গ্রিন”-গীতিনাট্যের উদঘাটক আলাপ- চারীর ন্যায় অতি-বিলম্বিত লয়ে বাদিত হইতেছে। পরে, উহা “দুন্”-লয়ে বাজিতে লাগিল, তান-পল্লবে জটিল হইয়া উঠিল; কিন্তু শব্দের মাত্রা, আদৌ বৃদ্ধি না পাইয়া, শুধু ছন্দোময় গুঞ্জনে পরিণত হইল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, এই সকল শক্তিমান তন্ত্রীসমূহ হইতে নিঃশব্দপ্রায় সঙ্গীত বাহির হইতেছে!—যেন করপুট-বন্দী মক্ষিকার গুন্গুন্‌শব্দ, যেন জানলা-শাসির গায়ে পতঙ্গের ঘর্ষণশব্দ অথবা যেন Dragon-fly মক্ষিকার কাতরধ্বনি বলিয়া মনে হয়। উহাদের মধ্যে একজন মুখের মধ্যে একটি ছোট ইস্পাতের জিনিষ রাখিয়া তাহার উপর গণ্ডদেশ ঘর্ষণ করিয়া ফোয়ারার জলচ্ছ্বাসের ন্যায় একপ্রকার ছন্ছন্ শব্দ বাহির করিতেছে। একটা বৃহৎ “গিতারের উপর এবং অন্যান্য বিচিত্র যন্ত্রের উপর বাদক যেন অতি