পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
ইংরাজ-বর্জিত ভারতবর্ষ।

স্বর হইতে স্বরান্তরে গড়াইয়া যাইবার সময় ধ্বনিটা যেন আর্তনাদ করিয়া উঠে। সেই আবেগময় তানটি সজোরে পূর্ণস্বরে বাদিত হয় এবং তীব্র যাতনায় যেন একেবারে অধীর ও সংক্ষুব্ধ হইয়া উঠে। তখন টম্‌টম্‌গুলির বাদ্য, এই কম্পমান আর্তনাদকে আবৃত না করিয়া, এক প্রকার রহস্যময় তুমুল শব্দ বাহির করিতে থাকে। উহা মানবহৃদয়ের দুঃখযাতনার পরাকাষ্ঠা এরূপ তীব্রভাবে প্রকাশ করে—যাহা আমাদের উচ্চতম পাশ্চাত্য-সঙ্গীতের সাধ্যাতীত।•••

 —“হস্তীরা আসিয়া পৌঁছিয়াছে”—একজন বলিয়া উঠিল। আমি মুগ্ধ হইয়া সঙ্গীত শুনিতেছিলাম—এই বাক্যে আমার সেই মোহ ছুটিয়া গেল।•••হাতী আবার কোথা হইতে আসিল?—ও! মনে পড়িয়াছে; •• ভারতীয় সাজসজ্জায় সজ্জিত হাওদা-সমেত একটি হস্তী দেখিবার জন্য আমি ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলাম; এবং তদনুসারে আমার জন্য রাজার হস্তিশালা হইতে হস্তী সজ্জিত করিয়া আনিবার আদেশ হয়।

 সঙ্গীত থামিয়া গেল। কেন না, হাতী দেখিবার জন্য এখন আমাকে ঘরের বাহির হইতে হইবে। বাড়ীর দ্বারদেশ পার হইয়াই হঠাৎ দেখিলাম —আমার সম্মুখে তিনটা বড়-বড় হস্তী দণ্ডায়মান। অস্তমান সূর্যের আলোকে উদ্ভাসিত এই তিনটা হার্তী দ্বারদেশের সন্নিকটে আমার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করিতেছিল। উহাদের সর্ব্বশরীর সাজসজ্জায় এরূপ আবৃত যে, সম্মুখে আসিয়া প্রথমে আব কিছুই লক্ষ্য হয় না;—লক্ষ্য হয় শুধু উহাদের সুদীর্ঘ আত্মরক্ষণের অস্ত্র দন্তদয়, উহাদের কালো-ফুট্‌কি-যুক্ত গোলাপি-রঙের প্রকাণ্ড শুণ্ড, আর উহাদের কর্ণদ্বয়—যাহা হাতপাখার ন্যায় ক্রমাগত আন্দোলিত হইতেছে। সবুজ ও লাল রঙের দীর্ঘ পরিচ্ছদ; স্তম্ভযুক্ত হাওদা, ঘটিকার হার এবং জরির টুপি—যাহা উহাদের বিস্তৃত ললাট পর্য্যন্ত নাবিয়া আসিয়াছে। তিনটা হাতীই প্রকাণ্ড, ৭০ বৎসর বয়ঃক্রম, বেশ বলিষ্ঠ, আর এমন বশ্য—এমন শান্ত। উহাদের বুদ্ধিব্যঞ্জক