পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর-রাজ্যে।
৬১

ভয়ে-ভয়ে ও সন্তর্পণে হাত বুলাইয়া প্রায় একই সুর ক্রমাগত বাহির করিতেছে। পেচকের চাপা কণ্ঠস্বরের ন্যায়, ক্রমাগত হুহু!-হুহু!- এইরূপ শব্দ নির্গত হইতেছে। আবার সুদূর সমুদ্রতটের উপর বীচিভঙ্গ-শব্দের ন্যায় একপ্রকার চাপা আওয়াজ কোন-এক যন্ত্র হইতে বাহির হইতেছে। একপ্রকার “টম্‌টম্‌”-জাতীয় যন্ত্র আছে, তাহার কিনারার উপর বাদক অঙ্গুলীর আঘাত করিয়া বাজাইতেছে।•••তাহার পর, হঠাৎ অতর্কিতপূর্ব্ব কতকগুলি ঝাঁকানি আরম্ভ হইল, কিন্তু তাহার প্রচণ্ড প্রকোপ মুহূর্ত্তদ্বয়স্থায়ী। সেই সময় “গিতার”-তন্ত্রীগুলি যার-পর-নাই সজোরে কম্পিত হইতে থাকে এবং ‘ টম্‌টম্’-গুলি হইতেও তখন গম্ভীর চাপ আওয়াজ বাহির হইতে থাকে। কোন ফাঁপা মাটির উপর গুরুপদক্ষেপে হাতী চলিয়া গেলে যেরূপ শব্দ হয়, উহার সেইরূপ শব্দ; অথবা কোন গৃঢ়মার্গ অন্তর্ভৌম জল-প্রবাহনিঃসৃত কল্লোলের ন্যায়; - কিন্তু শীঘ্রই সমস্ত প্রশমিত হইল। আবার সেই পূর্ব্ববৎ নিঃশব্দপ্রায় বাদনক্রিয়া।

একজন ব্রাহ্মণযুবক—যার চোখদুটি অতি সুন্দর—সে ভূমির উপর আসনবদ্ধ হইয়া বসিয়া আছে; তাহার জানুর উপর একটি জিনিষ রহিয়াছে। অন্যান্য দ্রব্যাদি যেরূপ সুশোভন ও সুরুচিসূচক, এ জিনিষটা ঠিক তার বিপরীত। ইহা নিতান্ত রূঢ় গ্রাম্যধরণের। একটা সামান্য মাটির হাঁড়ি, তাহার মধ্যে কতকগুলো নুড়ি। হাঁড়ির বৃহৎ মুখটাতাহার নগ্ন সুবক্র বক্ষের উপর স্থাপিত। ঐ মুখের কিয়দংশ যে পরিমাণে খুলিয়া রাখিতেছে কিংবা বুকে চাপিয়া বদ্ধ করিতেছে, তদনুসাবে নিঃসৃত শব্দেরও তারতম্য হইতেছে। এবং অঙ্গুলীর দ্বারা সেই হাঁড়িটা এত তাড়াতাড়ি বাজাইতেছে যে, দেখিলে আশ্চর্য হইতে হয়। উহার শব্দ কখন লঘু, কখন গভীর, কথন খটখটে। এক-এক সময়ে যখন নুড়িগুলা নড়িয়া উঠে, তখন শিলা-বৃষ্টির ন্যায় পট্‌পট্‌শব্দ শ্রুত হয়। পূর্বোক্ত শব্দময় নিস্তব্ধতা ভেদ করিয়া যখন কোন একটি “গিতার” হইতে স্বতন্ত্রভাবে তান উথিত হয়, তখন কোন