পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কোথাকার নবাব?

 —মুরশিদাবাদের নবাব। সিরাজদৌলার বাবা।

 দীনু ভটচাজ বললেন—হা ঁবাবাজি, এখনো নাকি সায়েব কোম্পানী মুরশিদাবাদের নবাবকে খাজনা দেয়?

 ভবানী বললেন—তা হবে। ওসব আমি তত খোঁজ রাখিনে। আজ দুজন সন্ন্যিসির কথা বলবো আপনাদের, শুনে বড় খুশি হবেন।

 রূপচাঁদ মুখুয্যে বললেন—তাই বলে বাবাজি। ওসব নবাব-টবাবের কথায় দরকার নেই। আমি তো কুয়োর মধ্যি যেমন ব্যাঙ আছে, তেমনি আছি পড়ে। পয়সা নেই যে বিদেশে যাবো। বাবাজি ভয়ও পাই। কোথাও চিনি নে, গা ঁথেকে বেরুলি সব বিদেশ-বিভূঁই। চাকদা পজ্জন্ত গিইচি গঙ্গাস্তানের মেলায়—আর ওদিকি গিইচি নদে-শান্তিপুর। ইছামতী দিয়ে নৌকা বেয়ে রাসের মেলায় নারকেল বিক্রি করতে গিইছিলাম বাবাজি। বেশ দু’পয়সা লাভ করেছিলাম সেবার।

 সবাই ভবানীকে ঘিরে বসলেন। দীনু ভট্‌চাজ এগিয়ে এসে একেবারে সামনে বসলেন।

 ভবানী বললেন—আপনারা জানেন কিছুদিন আগে আমার একজন গুরুভাই এসেছিলেন। ওঁর আশ্রম হোল মীর্জাপুর।

 দীনু ভট্‌চাজ বললেন—সে কোথায় বাবাজি?

 —পশ্চিমে, অনেকদূর। সে আপনারা বুঝতে পারবেন না। চমৎকার পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে সেখানে এক সাধু থাকেন, আমাদের বাঙালী সাধু, তাঁর নাম হৃষিকেশ পরমহংস। ছোট একখানা ঝুপড়িতে দিনরাত কাটান। নির্জন বনে শিরীষ ফুল আর কাঞ্চন ফুল ফোটে, ময়ূর বেড়ায় পাহাড়ী ঝর্ণার ধারে, আমলকী গাছে আমলকী পাকে—

 রূপচাঁদ মুখুয্যে আবেগভরে বললেন—বাঃ বাঃ—আমরা কখনো দেখি নি এমন জায়গা—

 দীনু ভট্‌চাজ বললেন—পাহাড় কাকে বলে তাই দ্যাখলাম না জীবনে

১১৭