পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —ওঃ, অনেকদূর গিয়েছিলেন এই রাত্তিরি॥

 —আমার কাছে বন্দুক আছে। ভয় কি আছে? ভূটে খাইবে না।

 —আজ্ঞে না, ভূত কোথা থেকি আসবে?

 —নো, নো, ভজা বলিটেছিল মাটে ভূট আছেঃ। আলো জ্বলে যার আসে, যায় আসে—কি নাম আছে ভা। আলো ভূট?

 ভজা উত্তর দেবার আগে রাজারাম বললেন—আজ্ঞে আমি জানি। এলে ভূত। আমি নিজে কতবার মাঠের মধ্যি এলে ভূতির সামনে পড়িচি।ওরা মানুষের কিছু বলে না।

 বড়সাহেব এই সময় হেসে বললেন—টোমার মাথা আছে। ভূট আছে। উহা গ্যাস আছে। গ্যাস জ্বলিয়া উঠিল টো টুমি ভূট দেখিল।•••(এর পরে কথাটা হোলো মেমসাহেবের দিকে চেয়ে ইংরিজিতে, রাজারাম বুঝলেন না) খবগোশ কেমন?

 ~~আজ্ঞে খুব ভালো।

 —টুমি খাও?

 —না সাহেব, খাইনে। অনেকে খায় আমাদের মধ্যি, আমি খাইনে।

 এই সময় প্রসন্ন চক্রবর্তী আমীন ও গিরিশ সরকার মুহুরী অনেক খাতাপত্র বয়ে নিয়ে এসে হাজির হোলল। রাজারাম ঘুঘু লোক। তিনি বুঝলেন আজ সারারাত কুঠির দপ্তরখানায় বসে কাজ করতে হবে। আমীন দাগ-মার্কার খতিয়ান এনে হাজির কাছে কেন? দাগের হিসেব এত রাত্রে কি দরকার?

 ছোটসাহেব কি একটা বললে ইংরিজিতে। বড়সাহেব তার একটা লম্বা জবাব দিলে হাত-পা নেড়ে-খাতার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে। ছোটসাহেব ঘাড় নাড়লে।

 তারপর কাজ আরম্ভ হোলো সারারাত-ব্যাপী। ছোটসাহেব, প্রসন্ন আমীন, তিনি, গিরিশ মুরী ও গদাধর চক্রবর্তী মুহুরীতে মিলে। কাজ আর কিছুই নয়, মার্কা-খতিয়ান বদলানো, যত বেশি জমিতে নীলের দাগ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন গ্রামে, তার চেয়ে অনেক কম দেখানো। জরীপের আসল

১৪৬