পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খতিয়ান দৃষ্টে নকল খতিয়ান তৈরী করার নির্দেশ দিলে ডেভিড় সাহেব।

 রাজারাম বললেন -সায়েব একটা দরকারী জিনিসের কি হবে?

 ডেভিড -কি জিনিস?

 প্রজাদের বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ? তার | কি হবে? দাগ খতিয়ানে আমাদের সুবিধের জন্যে আঙ্গুলের ছাপ নিতি হয়েছিল। এখন তারা নকল খাতায় দেবে কেন? যে সব বদমাইশ প্রজা। নবু গাজির মামলায় রাহাতুলপুর শুদ্দ আমাদের বিপক্ষে। রামু সর্দারের খুনের মামলায় বাঁধালের প্রজা সর চটা। কি করতি হবে বলুন।

 —বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ জাল করতি হবে।

 —সে বড় গোলমেলে ব্যাপার হবে সায়েব। ভেবে কাজ করা ভালো।

 —তুমি ভয় পেলি চলবে কেন দেওয়ান? ডঙ্কিনের কথা মনে নেই? এক খানা আর দু’পেগ হুইস্কি। —এক খানা নয় সায়েব, অনেক খানা। মাপন ভেবে দেখুন - কাঁসিতলার মাঠের সে ব্যাপার আপনার মনে আছে তো? আমরাই গিরিধারী জেলেকে ফাঁসি মিছিলাম। তখনকার দিনে আর এখনকার দিনে তফাত অনেক। শ্রীরাম বেয়ারাকে এখন সড়কি নিয়ে রাত্রে পথ চলতে হয় সায়েব। আজই শোনলাম ওর মুখি।

 ভোর পর্যন্ত কুঠির দপ্তরখানায় মোমবাতি জ্বেলে কাজ চলল। সবাই অত্যন্ত ক্লান্ত।, ছোটসাহেব ও ডেভিডব ও বিশ্রাম নেয়নি বা কাজে ফাকি দেয়নি। সূর্য ওঠার আগেই বড়সাহেব এসে হাজির হোলো। দুই সাহেব কি কথাবার্তা হলো, বড়সাহেব রাজারামকে বললেন—মার্কা খতিয়ান বদল হইল?

 —আজ্ঞে।

 ~সব ঠিক আছে?

 —এখনো তিন দিনির কাজ বাকি সায়ের। টিপসইয়েব কি করা যাবে সায়েব? অত টিপসই কোথায় পাওয়া যাবে দাগ খতিয়ানে আপনিই বলুন।

১৪৭