পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —লাড মেও?

 চণ্ডীমণ্ডপে পাশাখেলা আর জমলো না। লর্ড মেয়ো মরুন বা বাঁচুন তাতে এদের কোনো কিছু আসে-যায় না—এই নামটাই সবাই প্রথম শুনলো। তবে নতুন একটা যা-হয় ঘটলো এদের প্রাত্যহিক একঘেয়েমির মধ্যে—সেটাই পরম লাভ। শ্রীনাথ খুব সবিস্তারে কলকাতার গল্প করলে—আপিস আদালত কিভাবে বন্ধ হয়ে গেল সংবাদ আসা মাত্রই।

 বেলা দুপুর ঘুরে গেল, খোকাকে নিয়ে ভবানী বাঁড়ুয্যে বাড়ী ফিরতেই তিলুর বকুনি খেলেন।

 —কি আক্কেল আপনার জিজ্ঞেস করি? কোথায় ছিলেন খোকাকে নিয়ে দুপুর পজ্জন্ত! ও খিদেয় যে টা-টা করচে? কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?

 খোকা দু’হাত বাড়িয়ে বললে—মা, মা—

 ভবানী বললেন—রাখো তোমার ওসব কথা। লাড মেও খুন হয়েছেন শুনেচ?

 —সে আবার কে গা?

 —বড়লাট। ভারতবর্ষের বড়লাট।

 —কে খুন করলে?

 —একজন পাঠান।

 —আহা কেন মারলে গো? ভারী দুঃখু লাগে।


 লর্ড মেয়ো খুন হবার কিছুদিন পরেই নীলকরদের বড় সংটের সময় এল। নীলকর সাহেবদের ঘন-ঘন বৈঠক বসতে লাগলো। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব নিজের আরদালি পাঠিয়ে যখন তখন পরোয়ানা জারি করতে লাগলেন।

 রাজারাম ঘোড়ায় করে যাচ্ছিলেন নীলকুঠির দিকে, রামকানাই কবিরাজ একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে, বললে—একটু দাঁড়াবেন দেওয়ানবাবু?

 রাজারাম ভ্রূকঞ্চিত করে বললেন—কি?

 —একটু দাঁড়ান। একটা কথা শুনুন। আপনি আর এগোবেন না। কানসোনার বাগ্‌দিরা দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ষষ্ঠীতলার মাঠে। আপনাকে

২০১