বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —খাটতে দ্যাও কেন? ও হোলো খোকার মা। ওকে না খাটিয়ে তোমাদের তো খাটা উচিত।

 —খাটতি দেয় কিনা! আপনি জানেন না আর! আপনার যত দরদ দিদির জন্যি। আমরা কেডা? কেউ নই। বানের জলে ভেসে এসেচি। নিন, পান খাবেন?

 —খোকনের গায়ে কাঁথাখানা বেশ ভালো করে দিয়ে দাও। বড্ড ঠাণ্ডা আজ। পান সাজলে কে?

 —নিলু। জানেন আজ নিলুর বড্ড ইচ্ছে ও আপনার কাছে থাকে।

 —বাঃ, তুমি দিলে না কেন?

 —ঐ যে বললাম, আপনি সবতাতে আমার দোষ দেখেন। দিদির সব ভালো, নিলুর সব ভালো। আমার মরণ যদি হোতো—

 ভবানী জানেন, বিলু এরকম অভিমান আজকাল প্রায়ই প্রকাশ করে।

 ওর মনে কেন যে এই ধরনের ক্ষোভ! মনে মনে হয়তো বিলু অসুখী। খুব শান্ত, চাপা স্বভাব—তবুও মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে বেরিয়ে যায় মনের দুঃখ। তাই তো, কেন এমন হয়? তিনি বিলুকে কখনো অনাদর করেন নি সজ্ঞানে। কিন্তু মেয়েমানুষের সূক্ষ্ম সতর্ক দৃষ্টি হয়তো এড়ায় নি, হয়তো সে বুঝতে পেরেচে তাঁর সামান্য কোনো কথায়, বিশেষ কোনো ভঙ্গিতে যে তিনি সব সময় তিলুকে চান। মুখে না বললেও হয়তো ও বুঝতে পারে।

 দুঃখ হোলো ভবানীর। তিন বোনকে একসঙ্গে বিয়ে করে বড় ভুল করেচেন। তখন বুঝতে পারেন নি—এ অভিজ্ঞতা কি করে থাকবে সন্ন্যাসী পরিব্রাজক মানুষের! তখন একটা ভাবের ঝোঁকে করেছিলেন, বয়স্থা কুলীন কুমারীদের উদ্ধার করবার ঝোঁকে। কিন্তু উদ্ধার করে তাদের সুখী করতে পারবেন কিনা তা তখন মাথায় আসে নি।

 মনে ভেবে দেখলেন, সত্যি তিনি বিলুকে অনাদর করে এসেছেন। সজ্ঞানে করেন নি, কিন্তু যে ভাবেই করুন বিলু তা বুঝেচে। দুঃখ হয় সত্যিই ওর জন্যে।

 ভবানী দেখলেন, বিলু দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে কাঁদচে।

২৩৬