তিলু ও নিলু সকলের পাতে নুন পরিবেশন করচে দেখে খোকা বায়না ধরলে, সেও নুন পরিবেশন করবে। সকলের পাতে নুন দিয়ে বেড়ালে। দেবার আগে প্রত্যেকের মুখের দিকে বড় বড় জিজ্ঞাসু চোখে চায়। বলে—তুমি নেবে? তুমি নেবে?
দেখতে বড় সুন্দর মুখখানি, সকলেই ওকে ভালোবাসে। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে, তা হবে না, মাও সুন্দরী, বাপও সুপুরুষ। লোকে ঘাটিয়ে তার কথা শোনবার জন্যে আর সুন্দর মুখখানি দেখবার জন্যে অকারণে বলে ওঠে-খোকন, এই যে ইদিকি লবণ দিয়ে যাও বাবা-
খোকা ব্যস্ত সুরে বলে-যাই-ই-
কাছে গিয়ে বলে-তুমি ভালো আছেন? নুন নেবে?
রামকানাই কবিরাজ কালীপূজার তন্ত্রধারক ছিলেন। তিনিও এক পাশে খেতে বসেচেন। তিলু তার পাতে গরম গরম লুচি দিচ্ছিল বার বার এসে। রামকানাই বললেন-না; দিদি, কেন এত দিচ্চ? আমি খেতে পারিনে যে অত।
রামকানাই কবিরাজ বুড়ো হয়ে পড়েচেন আগেকার চেয়ে। কবিরাজ ভালো হোলে কি হবে, বৈষয়িক লোক তো নন, কাজেই পয়সা জমাতে পারেন নি। যে দরিদ্র সেই দরিদ্র। বড় সাহেব শিপটন একবার তঁকে ডাকিয়ে পূর্ব অত্যাচারের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ কিছু টাকা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ম্লেচ্ছের দান নেবেন না বলে রামকানাই সে অর্থ প্রত্যাখ্যান করে চলে এসেছিলেন।
ভোজনরত ব্রাহ্মণদের দিকে চেয়ে দূরে দাড়িয়েছিল লালমোহন পাল। আজ তার সৌভাগ্যের দিন, এতগুলি কুলীন ব্রাহ্মণের পাতে সে লুচি-চিনি দিতে পেরেচে। আধমণ ময়দা, দশ সের গব্যঘৃত ও দশ সের চিনি বরাদ্দ। দীয়তাং ভুজ্যতাং ব্যাপার। দেখেও সুখ।
—ও তুলসী, দাড়িয়ে দ্যাথোসে-চক্ষু সার্থক করো-
তুলসী এসে লজ্জায় কাঁটালতলায় দাড়িয়েছিল—স্ত্রীকে সে ডাক দিলে। তুলসী একগলা ঘোমটা দিয়ে স্বামীর অদূরে দাঁড়ালো। একদৃষ্টে স্বামী-স্ত্রী চেয়ে রইল নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণদের দিকে। নালু পালের মনে কেমন এক ধরনের আনন্দ,
২৭৯