যা রোজই রেঁধে থাকে প্রসন্ন, তার অতি প্রিয় খাদ্য। খুব বেশি কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাসকলাইয়ের ডাল, উচ্ছেভাজা। ব্যস! হয়ে গেল। কে বেশি ঝঞ্চাট করে। আর অবিশ্যি ঘোল আছে।
—ডাল রান্না করলেন নাকি?
জলের ঘটি উঁচু করে আলগোছে খেতে খেতে প্রায় বিষম খেতে হয়েছিল আর কি! কোথাকার ভূত এ ব্যাটা, দেখচিস একটা মানুষ তেওপ্পরে দুটো খেতে বসেচে। এক ঘটি জল খাচ্চে, ঠিক সেই সময় তোমার কথা না বললে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল, না? তোমার বাপের জমিদারি লাটে উঠেছিল, বদমাইশ পাজি? বিরক্তির সুরে জবাব দেয় প্রসন্ন চক্কত্তি—হুঁ। কেন?
—কিসের ডাল?
—মাসকলাইয়ের।
—আমারে একটু দেবেন? বাটি আনবো?
—নেই আর। এক কাঁসি রেঁধেছিলাম, খেয়ে ফেললাম।
—আমি যে ঘোল এনিচি আপনার জন্যি—
—আমার ঘোল আছে। কিনিছিলাম।
—এ খুব ভালো ঘোল। সনকা গোয়ালিনীর নামডাকী ঘোল। বিষ্টু ঘোষের বিধবা দিদি। চেনেন? মাঠাওয়ালা ঘোল ও ছাড়া কেউ কত্তি জানেও না। খেয়ে দ্যাখেন।
নামটা বেশ। মরুক গে। ঘোল খারাপ করে নি। বেশ জিনিসটা। এ গাঁয়ে থাকে সনকা গোয়ালিনী? বয়েস কত?
এক কল্কে তামাক সেজে খেয়ে প্রসন্ন একটু শুয়ে নিলে ময়লা বিছানায়। সবে সে চোখ একটু বুজেচে, এমন সময় পাইক এসে ডাক দিলে—নায়েবমশাই ডাকচেন আপনারে—
ধড়মড় করে উঠে প্রসন্ন চক্কত্তি কাছারীঘরে ঢুকলো। অনেক প্রজার ভিড় জমেচে। আমীনের জরীপী চিঠার নকল নিতে এসেচে আট-দশটি লোক। নায়েব ঘনশ্যাম চাকলাদার রাশভারি লোক, পাকা গোঁপ, মুখ গম্ভীর, মোটা ধুতি পরনে,