বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেওয়ানজির! এদিকে সৎ।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে আর পরমহংস সন্ন্যাসীকে দিনকতক প্রায়ই নদীর ধারে বসে থাকতে দেখা যেতো। ঠিক হোল যে সন্ন্যাসী তিলু বিলু নিলুকে দীক্ষা দেবেন। তিলু রাত্রে স্বামীকে বললে আপনি গুরু করেচেন?

 —কেন?

 —দীক্ষা নেবেন না?

 —কি বুদ্ধি যে তোমার! আহা মরি! এই সন্ন্যিসি ঠাকুর আমার গুরুভাই হোল কি ক’রে যদি আমার দীক্ষা না হয়ে থাকে?

 —ও ঠিক ঠিক। আমিও দীক্ষা নেবো না।

 —কেন? কেন?

 —তিলু কিছু বললে না। মুচকি হেসে চুপ করে রইল। প্রদীপের আলোর সামনে নিজের হাতের বাউটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেই দেখতে লাগলো। একটা ছোট ধুনুচিতে ধুনো গুঁড়ো করে দিতে লাগলো। এটি ভবানীর বিশেষ খেয়াল। কোনো শৌখিনতা নেই যে স্বামীর, কোনো আকিঞ্চন নেই, কোনো আবদার নেই—স্বামীর এ অতি তুচ্ছ খেলালটুকুর প্রতি তিলুর বড় স্নেহ। রোজ শোবার সময় অতি যত্নে ধুনো গুঁড়ো ক’রে সে ধুনুচিতে দেবে এবং বার বার স্বামীকে জিগ্যেস করবে—গন্ধ পাচ্ছেন? কেমন গন্ধ—ভালো না?

 তিলুকে হঠাৎ চলে যেতে উদ্যত দেখে ভবানী বললেন—চলে যাচ্চ যে? খোকা কই?

 তিলু হেসে বললে—আহা, আজ তো নিলুর দিন। বুধবার আজ যে—মনে নেই? খোকা নিলুর কাছে। নিলু আনবে।

 —না, আজ তুমি থাকো। তোমার সঙ্গে কথা আছে।

 —বা রে, তা কখনো হয়। নিলু কত শখের সঙ্গে ঢাকাই শাড়ীখানা পরে খোকাকে কোলে ক’রে বসে আছে।

 —তুমি থাকলে ভালো হোত তিলু। আচ্ছা বেশ। খোকনকে নিয়ে আসতে বলো।

৮১