Ir মুগলাঙ্গুরীয় বৎসর বয়স অতীত হইবার পূর্ব্বে, মৃত্যুর এক সম্ভাবন ছিল । গণিয়া দেখিলেন যে, ঐ বয়স অতীত হইবার পূর্বে এবং বিবাহের পঞ্চবৎসরমধ্যে পৗশয্যায় শয়ন করিয়া তাহার প্রাণত্যাগ করিবার সম্ভাবনা । কিন্তু যদি কোন রূপে পঞ্চ বৎসর জীবিত থাকেন, তবে দীর্ঘজীবী হইবেন । অতএব পাত্রের ত্রয়োবিংশতি বৎসর অতীত হইবার সময়ে বিবাহ দেওয়া স্থির করিলেন । কিন্তু এত দিন অবিবাহিত থাকিলে পাছে তুমি কোন প্রকার চঞ্চল হও, বা . গোপনে কাহাকে বিবাহ কর, এই জন্ত তোমাকে ভয় দেখাইবার কারণে এই পত্রার্থ তোমার অলঙ্কারমধ্যে রাখিয়াছিলেন । তৎপরে বিবাহ দিয়৷ পঞ্চ বৎসর সাক্ষাৎ না হয়, তাহার জন্য যে যে কৌশল করিয়াছিলেন, তাহা জ্ঞাত আছ । সেই জন্যই পরস্পরের পরিচয় মাত্র পাও নাই । কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাস হইল বড় গোলযোগ হইয়া উঠিয়াছিল। কয়েক মাস হইল আনন্দস্বামী এ নগরে আসিয়া, তোমার দারিদ্র্য শুনিয়া নিতান্ত দুঃখিত হইলেন। তিনি তোমাকে দেখিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎ করেন নাই । তিনি আসিয়া আমার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তোমার বিবাহ বৃত্তান্ত আমুপূবিক কহিলেন। পরে কহিলেন, ‘আমি যদি জানিতে পারিতাম যে, হিরন্ময়ী এরূপ দারিদ্র্যাবস্থায় আছে, তাহ হইলে আমি উহ। মোচন করিতাম । এক্ষণে আপনি উহার প্রতীকার করিবেন। এ বিষয়ে আমাকেই আপনার ঋণী জানিবেন। আপনার ঋণ আমি পরিশোধ করিব। সম্প্রতি আমার আর একটি অনুরোধ রক্ষা করিতে হইবে । হিরন্ময়ীর স্বামী এই নগরে বাস করিতেছেন। " উহাদের পরস্পর সাক্ষাৎ না হয়, ইহা আপনি দেখিবেন । এই বলিয়া তোমার স্বামীর পরিচয়ও আমার নিকটে দিলেন। সেই অবধি অমলা যে অর্থব্যয়ের দ্বারা তোমার দারিদ্র্যদুঃখ মোচন করিয়া আসিতেছে, তাহ আমা হইতে প্রাপ্ত। আমি তোমার পিতৃগৃহ ক্রয় করিয়া তোমাকে বাস করিতে দিয়াছিলাম। হার আমিই পাঠাইয়াছিলাম—সেও তোমার পরীক্ষার্থ।” হি। তবে আপনি এ অঙ্গুরীয় কোথায় পাইলেন ? কেমই ধ। আমার নিকট স্বামীরূপে পরিচয় দিয়া, আমাকে প্রতারিত করিয়াছিলেন ? পুরন্দরের গৃহে বাস করিতেছি বলিয়া কেনই বা অমুযোগ করিতেছিলেন ? রাজা । যে দণ্ডে আমি আনন্দস্বামীর অমুজ্ঞা পাইলাম, সেই দণ্ডেই আমি তোমার প্রহরায় লোক নিযুক্ত করিলাম। সেই দিনই অমলা দ্বারা তোমার নিকট হার পাঠাই।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৬
অবয়ব