Պe ইন্দির তিনি। ইন্দিরার বিবাহ কবে হইয়াছিল ? * আমি । —সালে বৈশাখ মাসের ২৭ তারিখে শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীতে। ' তিনি চুপ করিয়া ভাবিলেন। তার পর বলিলেন, “আমায় অভয় দাও, আমি আর তুইট কথা জিজ্ঞাসা করিব ?” আমি । অভয় দিতেছি । বল । তিনি। বাসরঘরে সকলে উঠিয়া গেলে, আমি ইন্দিরাকে নির্জনে একটি কথা ৰলিয়াছিলাম, সে তাহার উত্তর দিয়াছিল। কি কথা সে, বল দেখি ? বলিতে আমার একটু বিলম্ব হইল। কারণ সে কথাটা মনে করিতে আমার চক্ষে জল আসিতেছিল, আমি তাহ সামলাইতেছিলাম। তিনি বলিলেন, “এইবার বোধ হয় ঠকিলে। বঁচিলাম—তুমি মায়াবিনী নয়।” আমি চক্ষের জল চক্ষের ভিতরে ফেরত দিয়া বলিলাম, “তুমি ইন্দিরাকে জিজ্ঞাসা করিলে, বল দেখি, আজ তোমার সঙ্গে আমার কি সম্বন্ধ হইল ? ইন্দির বলিল, ‘আজ হইতে তুমি আমার দেবতা হইলে, আমি তোমার দাসী হইলাম।” এই ত গেল একটা প্রশ্ন। আর একটা কি ?” তিনি। আর জিজ্ঞাসা করিতে ভয় করিতেছে। আমি বুঝি বুদ্ধি হারাইলাম। তবু বল। ফুলশয্যার দিন ইন্দিরা তামাসা করিয়া আমাকে গালি দিয়াছিল, আমিও তার কিছু সাজা দিয়াছিলাম। বল দেখি, সে কথাগুলি কি ? আমি। তুমি ইন্দিরার হাত এক হাতে ধরিয়া, আর হাত তার কাধে দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, ইন্দিরে, বল দেখি আমি তোমার কে ? তাতে ইন্দির উত্তর করিয়াছিল, , ‘শুনিয়াছি, তুমি আমার ননদের বর। তুমি দণ্ডস্বরূপ তার গালে একটা ঠোন মারিয়া, তাকে একটু অপ্রতিভ দেখিয়া পরিশেষে মুখচুম্বন করিয়াছিলে। বলিতে বলিতে আমার শরীর অপূর্ব্ব আনন্দরসে আপ্লুত হইল—সেই আমার জীবনের প্রথম মুখচুম্বন। তার পর স্বভাষিণীকৃত সেই সুধাবৃষ্টি। ইহার মধ্যে ঘোরতর অনাবৃষ্টি গিয়াছে। হৃদয় শুকাইয়৷ মাঠ ফাটা হইয়াছিল। - এই কথা ভাবিতেছিলাম, দেখিলাম, স্বামী, ধীরে ধীরে, বালিসের উপর মাথা রাখিয়া চক্ষু বুজিলেন। আমি বলিলাম, “আর কিছু জিজ্ঞাসা করিবে ?” তিনি বলিলেন, “না। হয় তুমি স্বয়ং ইন্দির, নয় কোন মায়াবিনী।”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭২
অবয়ব