পাতা:ইসলামী ধর্মতত্ত্বঃ এবার ঘরে ফেরার পালা.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঐতিহাসিকের অভিমত

বর্তমান যুগে এক সম্প্রদায়ের হিন্দু প্রচার করিয়াছেন যে ইংরাজ শাসনের পূর্বে ভারত কখনও পরাধীন হয় নাই, কারণ মুসলমানেরা এদেশেই বসবাস করিত। এ যুক্তির অনুসরণ করিলে বলিতে হয় যে, অস্ট্রেলিয়ার “মাওরী জাতি" এবং আমেরিকার “রেড ইণ্ডিয়ান" অর্থাৎ আদিম অধিবাসীরা ধ্বংস হইয়াছে বটে কিন্তু কখনও পরাধীন হয় নাই, কারণ ইংরেজ শাসকরা তাহাদের দেশেই বাস করিত।

মুসলমান রাজ্যে কাফের হিন্দুদের কোন স্থান নাই; ইহারা জিম্মী অর্থাৎ আশ্রিতের ন্যায় জীবন যাপন করিবে এবং নাগরিকের প্রধান প্রধান অধিকার হইতে বঞ্চিত থাকিবে...... (১) হিন্দুদিকে নিজের জন্মভূমিতে বাস করিতে হইলে বিনীতভাবে মাথাপিছু কর দিতে হইবে—ইহার নাম জিজিয়া। (২) হিন্দুরা দেবদেবীর মূর্তির জন্য কোন মন্দির নির্মাণ করিতে পারিবে না। কার্যত ইহার ব্যাপক অর্থ দাঁড়াইয়াছিল যে, যে সকল মন্দির আছে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলাও পুণ্যের কাজ। (৩) যদি কোন অ-মুসলমান ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয় তবে তাহাকে কেহ বাধা দিতে পারিবে না, কিন্তু যদি কেহ কোন মুসলমানকে অন্য ধর্মে দীক্ষিত করে তােহা হইলে যে কোন মুসলমান ঐ দুইজনকে স্বহস্তে বধ করিতে পারিবে।....ইসলামের বিধি অনুসারে হিন্দু কোন মুসলমান দাস রাখিতে পারিত না, কিন্তু মুসলমান হিন্দু দাস রাবিতে পারিত। মুসলমানেরা হিন্দু রাজ্য জয় করিয়া বহু হিন্দু বন্দীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করিয়া ক্রীতদাসরূপে ব্যবহার করিত।

ইহাও স্মরণ রাখিতে হইবে যে হিন্দুর্দিাকে উচ্চ রাজপদে নিয়ােগ, হিন্দু পণ্ডিত ও কবিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি কার্য সকল সময়ে হিন্দুর প্রতি প্রীতি বা সহৃদয়তার প্রতীক নহে। কারণ যে স্বল্পসংখ্যক মুসলমান সুলতান এই সমুদয় কার্যের জন্য প্রশংসা অর্জন করিয়াছেন—জলালুদ্দিন, বারবক শাহ, হােসেন শাহ প্রভৃতি -তাহারাও মন্দির ধ্বংসেও অন্যান্য প্রকারে হিন্দুদের উপর যথেষ্ট অত্যাচার করিয়াছেন। মুর্শিদকুলী খান এবং আলিবর্দীও ইহার দৃষ্টান্তস্থল। ... বাংলার সুলতানী আমলে প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত মন্দির ভাঙ্গিয়া তাহার উপকরণ দ্বারা মসজিদ তৈরি করা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। ত্রয়ােদশ শতকে জাফর খাঁ গাজী হইতে আরম্ভকরিয়া অষ্টাদশ শতকে মুশদকুলী খাঁহিন্দু মন্দির ভাঙ্গিয়া মসজিদ তৈরি করিয়াছিলেন। এইরূপে বাংলার প্রাচীন মন্দির প্রায় বিলুপ্ত হইয়াছে এবং শত শত দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস হইয়াছে।..... ঔরজেবের সময় ইহা চরমে ওঠে।

যত দেবতার মঠ  ভাঙ্গি ফেলে করি হঠ
নানা মতে করে অনাচার।

বামন পণ্ডিত পায়   থুতু দেয় তার গায়
পৈতা ছেড়ে বোটা মােছে আর।।

দীনেশচন্দ্র সেন হিন্দু-মুসলমানের ধ্বতির সম্বন্ধ উচ্ছসিত ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনিও লিখিয়াছেন, মুসলমান রাজা ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ সিন্ধু (গুপ্তচর) লাগাইয়া ক্রমাগত সুন্দরী হিন্দু ললনাগণকে অপহরণ করিয়াছেন। ষােড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্রীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানেরা এইরূপ কত হিন্দু রমণীকে যে বলপূর্বক বিবাহ করিয়াছিলেন তাহার অবধি নাই।