হয়ত প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের লেখনী লেখে না সবিস্তারে,
প্রতিদিন টেলিপ্রিণ্টারে যায় যথারীতি নিতান্ত সংক্ষিপ্ত সমাচারে
সাঙ্কেতিক অঙ্কের ভাষায় মৃত্যুর সংখ্যার নির্ভরযোগ্য খতিয়ান।
গ্রীষ্মে শীতে বর্ষায় গ্রামে গঞ্জে শহরের পথে বা প্রান্তরে
দিন কাটে রাত কাটে ছোট বড় বিচিত্র সংবাদ সংগ্রহে;
এখানে সেখানে কত প্রেম প্রতারণা তুচ্ছ ব্যর্থ জীবনের
সাদা কালো মুহূর্তের নগ্ন চিত্র হৃদয়ের অদৃশ্য ক্যামেরা
মুগ্ধ বিস্ময়ে ধরে রাখে কিছুক্ষণ। খাদ্যহীন বস্ত্রহীন
কৃষক মজুর মুটে কেরানী দালাল খুনী বেকার মাতাল,
বৃদ্ধ পঙ্গু কুষ্ঠরোগী পুত্রহারা শোকাতুরা উন্মাদিনী মাতা,
তাদের কথা কি কোন পত্রিকার শিরোনামা খবর হয়েছে?
আমি সাংবাদিক। তবু আমার ডায়েরীতে তারা উজ্বল নায়ক
পত্রিকা বা ইতিহাসে তারা থাকে চিরদিন নেপথ্য সৈনিক।
হয়ত হাটের প্রান্তে অখ্যাত অজ্ঞাত কোন ভগ্ন কুটীরে
দিনান্তের ক্লান্তি মুছে মাদুরে বালিশ রেখে ক্ষণিক বিশ্রাম;
সস্তা হোটেলের ডাল ভাতে ক্ষিধে মেটে। ছোট গেলাসেতে চা।
ষ্টেশন বিশ্রামগৃহে কখনও বা পেতে হয় স্বর্গের স্বাদ।
দক্ষ শিকারীর চোখ নিয়ে তীক্ষ্ম অন্বেষণে কাছে কিংবা দূরে
খবরের জাল পেতে জীবিকা খবর কুড়োই নানা প্রান্ত থেকে।
আমি সাংবাদিক। তবু আমি জানি, যদি কোন স্তব্ধ অবসরে
আকস্মিক আক্রমণে মৃত্যু এসে হানা দেয় আমার দ্বারে,
সেই মর্মান্তিক শোক সংবাদের প্রতিলিপি পৌঁছবে না টেলিপ্রিণ্টারে,
সান্ত্বনার বাণীযুক্ত ভদ্র আকৃতিতে গুণকীর্তি বর্ণনায়
মুদ্রিত হবে না কোন বিখ্যাত পত্রিকা কিংবা স্মারকগ্রন্থে।
বছর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ সংবাদের বেচাকেনা হাট
কোটি কোটি মূল্যবান সংবাদের জন্মদাতা নিজে মূল্যহীন।
এ কথা সত্য তবু, আমি এক সাংবাদিক, সংবাদ আমার জীবিকা।
পাতা:ইস্তাহার (বিশ্বজ্ঞান প্রকাশনী).pdf/২৬
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮